খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের গডমাদার, জেলে বেশ ভালো আছে: শেখ হাসিনা
৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০০
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া জেলে আছেন। তিনি সেখানে বেশ ভালো আছেন।
গণভবনে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জাতীয় কমিটির সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসের গডমাদার হচ্ছে খালেদা জিয়া। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এর চেয়ে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সেই অবরোধ-হরতাল এখনও তোলেনি। তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে! সে তো জেলে আছে, বেশ ভালো আছে। তার জন্য আবার কারও কারও মায়াকান্নাও দেখি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিভিন্ন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা এক টানা তৃতীয়বার সরকারে এসেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলে বিএনপি। কিন্তু এটা বিএনপি ভুলে যায়। তারা যে নমিনেশন দিয়েছিল ইলেকশনে, এক একটা সিটের পেছনে দুইজন তিনজন করে নমিনেশন। যে যখন যার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, তারে নমিনেশন দিচ্ছে। এক ভাগ দিতে হচ্ছে লন্ডনে আর দুই ভাগ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশে। কাউকে হয়ত গুলশানের অফিসকে সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে, কাউকে পুরানা পল্টনের অফিসের সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে। যে দিতে পারছে না, সে পাচ্ছে না। সকালে একজন নমিনেশন পেল তার দুই ঘণ্টা পর গিয়ে আরেকজন পেল, তারপর আরেকজন পেল।’
বরাবরের ন্যায় এবারও ‘বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্য’ নিয়ে সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সিটে যদি এই রকম দুইজন, তিনজন করে নমিনেশন দেয়! তাহলে তারা তো জেতার জন্য ইলেকশন করেনি। মনে হচ্ছিল, এটিকে তারা বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল।’
‘আসলে আন্তর্জাতিকভাবে যে সার্ভেটা হয়েছিল, তাতে সবাই দেখতে পাচ্ছিল বিএনপি সিট পাবে না। জিততে পারবে না। সে জন্য তারা নির্বাচনটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবেই নিয়ে নেয়।’
‘কাজেই অন্যকে দোষারোপ করার কোনো মানে হয় না। তারপরে তাদের যে কয়কজন জিতেছে পার্লামেন্টে এসেছে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একটি কথা মনে রাখতে সবাইকে। আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সন্ত্রাস আমরা দমন করেছি। অর্থ্যাৎ এই সন্ত্রাসের গডমাদার হচ্ছে খালেদা জিয়া। সেই এই বাংলা ভাই সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা এর থেকে বড় সন্ত্রাসী কাজ তো হয় না। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা এর থেকে বড় সন্ত্রাসী কাজ আর কী হতে পারে?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ ডেকেছিল, যে অবরোধ এখনও তিনি তোলেননি। সেই অবরোধে তিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। এ মানুষ পুড়িয়ে মারা, এতিমের জন্য টাকা এসেছে। সেই টাকাটা এতিমখানায় না দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ঢুকালো। তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারই প্রিয় ব্যক্তিত্বরা। যারা ক্ষমতায় ছিল। সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেখানে আওয়ামী লীগ কী করেছে? আমার বিরুদ্ধে তো খালেদা জিয়া তো ক্ষমতায় থাকতে ১২টা মামলা করেছিল এবং আমাদের বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তখন তো মামলা দিয়েছে। কিন্তু একটি মামলাও প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুধু এটাই না, সে তো কোর্টেও যায় না। কোর্টে হাজির হয় না। তার বিরুদ্ধে গ্যাটকোর কেস, তার বিরুদ্ধে নাইকোর কেস, এবং এই সমস্ত তথ্য কিন্তু আমরা দিইনি। আমেরিকা থেকেই কিন্তু এই তথ্য বেরিয়েছে, নিজেদের দেশ থেকে যে সমস্ত কোম্পানির কাছ ঘুষ নিয়েছে, তাদের কাছে কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এসে গেছে।’
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বাংলাদেশে এসে তার দুর্নীতির সাক্ষ্য দিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সেটাও তারেকের নির্দেশে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
‘এখন তার (খালেদা জিয়া) জন্য আবার অনেকের খুব মায়াকান্না দেখি। খালেদা জিয়া যে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করল, এ কথাটা ভুলে যায় কেন? মানুষকে কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে, সেটা ভুলে যায় কীভাবে? তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে? কত বোন বিধবা হয়েছে? কত বোন আগুনে পুড়ে বিক্ষিপ্ত চেহারা হয়েছে, কত ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক কেউ তো বাদ যায়নি! সেই বীভৎস অবস্থা নিয়ে তো মানুষ বেঁচে আছে।
‘তাই বলব, যারা এ দরদটা দেখায়, তাদের আবার আগুনে পুড়ে যে সমস্ত মানুষকে এভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে, তাদের চেহারাটা একটু দেখে আসা উচিত। তারপর তার প্রতি দরদ দেখানো যায়।’
‘তারপরও সে যে জেলে, সে তো বেশ রাজার হালে আছে। জেলখানা থেকে এসেছে হাসপাতালে। তার জন্য মেড সার্ভেন্ট দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে শুনছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য আবার কাজের বুয়া থাকে! মানুষ এমনি কাজের বুয়া পায় না। খালেদা জিয়ার জন্য স্বেচ্ছায় একজন কারাবরণ করেছে, তার সেবা করার জন্য। এতটুকু সুবিধা তাকে দেওয়া হচ্ছে, এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের ভেতর কোনো প্রতিহিংসা পরায়ণতা নেই।’
গণভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
২০তম জাতীয় সম্মেলন পরবর্তী তিন বছর পর অবশেষে ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তর অন্তর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছরে একবারও আহ্বান করা হয়নি।
সভা পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতির এক পাশে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলির সদস্যরা ছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, আবুল মাল আবদুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিমণ্ডলির সদস্যদের মধ্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কর্ণেল(অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর উপস্থিত ছিলেন। বাকি সদস্যরা সামনের দিকে উপস্থিত ছিলেন
গঠনতন্ত্রের ১৭ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি জাতীয় কমিটি থাকিবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা হইতে একজন করিয়া সদস্য স্ব স্ব জেলা ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল কর্তৃক জাতীয় কমিটিতে নির্বাচিত হইবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কর্তৃক মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং উপর্যুক্তভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যবৃন্দকে লইয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটি গঠিত হইবে। জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা হইবে ৮১ (কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ), ৭৮ (সাংগঠনিক জেলা) ২১ জন (সভাপতি কর্তৃক মনোনীত) মোট ১৮০ জন।’
জাতীয় কমিটি দায়িত্ব হিসাবে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে-(খ) জাতীয় কমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ ও কাউন্সিলের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করিবে। (গ) যে কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিলকে সহায়তা করিবে। (ঘ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত ও কার্যাবলি পর্যালোচনা করিতে পারিবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনী বা বিশেষ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহ কার্যকর করিবে। (ঙ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ ও অনুমোদন করিবে। (চ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক কার্যনির্বাহী সংসদ কর্তৃক গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপিল বিবেচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে। (ছ) সংসদীয় পার্টি পরিচালনার জন্য নিয়মাবলি প্রণয়ন করিবে। (জ) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অন্যান্য কর্মকর্তা পদাধিকার বলে জাতীয় কমিটির কর্মকর্তারূপে কার্যক্রম পরিচালনা করিবে। (ঝ) বছরে জাতীয় কমিটির একটি সভা আহ্বান করিতে হইবে। তবে দলের সভাপতির নির্দেশক্রমে একাধিক সভা আহ্বান করা যাবে।