মিরপুরে ২ নারী হত্যা: পুলিশের সন্দেহে পালক ছেলে, দ্বিতীয় স্বামী
৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩৫
ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর সেকশন থেকে গৃহকর্ত্রী রহিমা বেগম (৭০) ও গৃহকর্মী সুমির (১৪) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহিমা বেগমের পালক ছেলের পাশাপাশি তার দ্বিতীয় স্বামীকে সন্দেহ করছে পুলিশ। এরই মধ্যে পালক ছেলে সোহেলকে আটক করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্বামীকে ধরার চেষ্টাও চলছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওই দুই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করে জানায়, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হতে পারে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহ দুইটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, মৃত রহিমার পালক ছেলে সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সোহেলকে নিয়ে পুলিশ গতকাল থেকেই অভিযানে রয়েছে। নিশ্চয়ই এ রহস্যের সুরাহা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দু’জনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে মৃত্যুর আসল কারণ। রহিমার পালিত ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য মিলেছে। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে। তাছাড়া শুধু সোহেলই নয়, দুই নারী হত্যার পেছনে অন্য আরেকজনকেও সন্দেহ করা হচ্ছে।’
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার খায়রুল আমিন বলেন, ওই বৃদ্ধার পালিত পুত্রসহ কয়েকজন মাঝেমধ্যে ওই বাসায় যেত বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। রহিমা কিভাবে এবং কেন একা থাকতেন, সেটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহতের স্বজনদের খোঁজ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার ক্লু বের করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত রহিমার দ্বিতীয়বার বিয়ে হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রথম পক্ষ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। দ্বিতীয় স্বামীও মাঝে মধ্যে তার বাসায় যেতেন। রাশিদা বেগম নামে তার একটি কন্যাসন্তান আছে। তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন বলে জানা গেছে। পালিত ছেলে সোহেল পিকাপ চালান। মাঝে মধ্যে বসে থাকেন। সোহেল মাদকাসক্তও বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় স্বামী ও পালিত ছেলেকে ঘিরে তদন্ত চলছে। সোহেলকে নিয়ে দ্বিতীয় স্বামীকে খুঁজতে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সোহেল ও দ্বিতীয় স্বামীর কেউ একজন সুমিকে ধর্ষণ করে থাকতে পারে। এদের দু’জনকে একসঙ্গে করতে পারলেই হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে জানায় পুলিশ সূত্র।
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক কে এম মাইনুউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, দু’জনকেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। রহিমা বেগমের গলার দু’পাশে কালো দাগ রয়েছে। গলায় টিপে ধরার দাগ রয়েছে, এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুমির শুধু গলার দু’পাশে দাগ রয়েছে।
চিকিৎসক আরও বলেন, মৃত্যুর আগে সুমি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা জানতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ডিএনএ নমুনা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা প্যাথলজিতে পাঠানো হবে।
পুলিশ জানায়, রহিমা বেগমের মেয়ে রাশিদা বেগম তার মায়ের মরদেহ নিয়ে গিয়েছেন। আর গৃহকর্মী সুমির স্বজনরা এখনো আসেনি। পরে এসে তারাও লাশ নিয়ে যাবে। তাদের সবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
এদিকে, বুধবার সকালে রাশিদা বেগম বাদীয় হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।