অ্যাটর্নি জেনারেলকে দুষলেন বিএনপির আইনজীবীরা
৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৪১
ঢাকা: দীর্ঘক্ষণ আদালতে অবস্থান করে বিচার কাজ বন্ধ রাখার ঘটনার জন্য রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে দায়ী করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আজকের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জামিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের হট্টগোলের পর সংবাদ সম্মেলনে করে এ দাবি জানান তারা।
আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তার সব দায়-দায়িত্ব অ্যাটর্নি জেনারেলের। কেননা বেগম জিয়ার মামলায় মেডিকেল রিপোর্টের দরকার হয় না। এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর। সাত বছরই তাকে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আজকে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে হাজতে রয়েছেন অথচ এই ধরনের মামলায় শত শত আসামি জামিন নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকে বলে এসেছি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা যাবে না। তারই প্রমাণ আজকে আপনারা পেয়েছেন। যেখানে সাত বছেরের সাজার মধ্যে দেড় বছর ধরে তিনি জেলে। তার ওপর একজন নারী হিসেবে জামিন পাবেন না এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক আর কিছু হতে পারে না।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি বিচারাধীন মামলায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। আল্লাহ যদি কোনোদিন সুযোগ দেন বাংলার জনগণও একদিন তাকেও হয়তো এমন সুযোগ দেবেন।
বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, একটা মামুলি মামলায়, মিথ্যা অভিযোগে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রায় একবছর ১০ মাস ধরে জেলে আছেন। কেন এতোদিনে তার জামিন হয়নি আজকে আপনারা তা বুঝতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির আদেশ হবে। যে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে, যেকোনো আদালতে মানবিক কারণে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দিতে পারেন। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলতে হয়, আজকে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দ্বিতীয় রিপোর্টে কি আছে সেটিও জয়নুল আবেদীন উল্লেখ করেছেন। একটা সামান্য অজুহাতে আদালত সাত দিন সময় দিয়েছেন। যা অপ্রত্যাশিত।
সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এবং এই কারণেই খালেদা জিয়ার মুক্তি এতোদিন দেরি হয়েছে উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, আমি মনে করি, শুধুমাত্র মানবিক কারণে তার জামিন চাওয়া হয়েছে। মেরিটে আলোচনা করেননি। শুধুমাত্র তার স্বাস্থ্যগত কারনে তার জামিন দেওয়া উচিত। আমাদের আইনে সেকশন ৪৯৭ এ এটা দেওয়া আছে। কোনো আসামি যদি নারী হন, অসুস্থ হন, বয়স্ক হন তাহলে কোর্ট তাকে জামিন দিতে পারেন। এটা একেবারে সামান্য জিনিস।
আজকের কোর্টের অবস্থা পেশাগত জীবনে দেখেননি উল্লেখ করে সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বলবো আমাদের আইনজীবীরা আজকে প্রচন্ড প্রতিবাদ করেছে এবং তারা ন্যায় বিচার চান বলে দাবি করেছেন আদালত কক্ষে। তারা ক্ষোভের থেকে এমনটি করেছেন।
তিনি বলেন, আমি পেশাগত জীবনে এ রকম ঘটনা দেখেনি। আমরা পাকিস্তান আমল থেকে বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এমনকি আওয়ামী লীগের বড় নেতাদেরও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জামিন পেয়েছি। এই ধরনের কোনো আচরণ বা এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমার পেশাগত জীবনে দেখিনি। তারপরও বলবো আমাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আদালত আমাদের কথা শোনেননি: জয়নুল আবেদীন
বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনারা বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছেন জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে জেল খানায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। বেগম জিয়া ভালো হিসেবে জেল খানায় গিয়েছেন কিন্তু এখন তিনি চিকিৎসার অভাবে জেল খানায় ধুকে ধুকে মরছেন। তার যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেই চিকিৎসা তিনি জেল খানায় পাচ্ছেন না। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন সেখানেও তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য আমাদেরকে সেখানে যেতে দিচ্ছেন না। এমনকি তার আত্মীয় স্বজনকেও যেতে দেওয়া হয় না তাকে।
এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি নিয়ে আদালতে হট্টগোল হয়। পুরো সময়টা ধরে বিচার কাজ বন্ধ করে বসে থাকতে হয় আপিল বিভাগের বিচারপতিদের।