বিশেষ পরিস্থিতিতে যে কেউ কিডনি দিতে পারবেন: হাইকোর্ট
৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:২৪
ঢাকা: মানবিক বিবেচনায় বিশেষ পরিস্থিতিতে নিকট আত্মীয়ের বাইরেও যে কোনো ব্যক্তি কিংবা পরিচিতজন স্বেচ্ছায় মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন বলে রায় দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে এ রায়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে ৬ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন।
পরে আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিচিত এবং সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিরা চাইলে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। এ রায়ের ফলে নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবে না— বিধান আর কার্যকর থাকছে না।
তিনি বলেন, আজকের রায়ের ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানে নিকট আত্মীয়র গণ্ডিতে পড়তে হবে না। একইসঙ্গে আদালত এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালাও সংশোধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশনা ইমাম আরও বলেন, আইন অনুসারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তাই আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনায় আদালত বলেছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ক্ষেত্রে ইমোশনাল ডোনেশন হচ্ছে কি না তা যাচাই-বাছাই করার জন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালে একটি করে প্রত্যয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। ওই প্রত্যয়ন বোর্ড আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসা করে দাতার সঙ্গে রোগীর পরিচয় নির্ণয় করবেন। দাতা নিজ ইচ্ছায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করছেন কি না; অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা হচ্ছে কি না এবং দাতা মানসিকভাবে সুস্থ্য ও মাদকাশক্ত কি না তাও নির্ণয় করবে বোর্ড।
বিদ্যমান আইনে নিকট আত্মীয় ছাড়া মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার সুযোগ রাখা হয়নি। সেই সংকীর্ণতা দূর করে আইনের প্রসারতা বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের ৩টি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
মানবদেহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯ এর ধারা তিনটি হলো— ২(গ), ৩ ও ৬। নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণ, দান এবং দাতার যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এই ধারাগুলোতে।
এছাড়াও ১৯৯৯ সালের আইনের কয়েকটি বিধি প্রণয়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এসব রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।