Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবন ডুবে যায় ছোটবেলার পুকুরে


৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:২১

কবির মৃত্যু হয়। কিন্তু থেকে যায় তাঁর ছন্দময় পঙক্তিমালা। বুকের ভেতরে বাজে কবিতার অনুরণন। এখানেই কবির জয়। কবিতার জয়। এক একটি কবিতার কী অদ্ভুত পঙক্তিমালা! কখনও কাঁদায়। কখনও ভাবায়। আবার কখনও-কখনও আবেগের জলে ভাসায়। শাকিল তেমনি করেই আমাদের ভাসিয়েছে। শাকিল কাঁদিয়েছেও। একজন তরুণ কবির মৃত্যু এতটা কাঁদাতে পারে আমরা জানতাম না। শুধু কবিতার প্রেমিক নয়, নয় কোনো প্রশাসনের ব্যক্তি কিংবা রাজনীতিবিদ, কেঁদেছে কিশোর-কিশোরী, কেঁদেছে তরুণ-তরুণী। নানান বয়সী, নানান শ্রেণির মানুষের চোখ ভিজেছিল শাকিলের মৃত্যুতে।

বিজ্ঞাপন

এতটা আপন করে কবে-কাকে-কখন যে শাকিল বিলিয়ে দিয়েছিল তাঁর ভালোবাসার ঐশ্বর্য্য! কেউ টেরই পায়নি। একদিন মৃত্যু এসে বলল, আমিই তোমাদের মাহবুবুল হক শাকিল। অথচ কী গভীর মমতায়, সংগোপনে কতজনের যে হাত ধরে দৃপ্তকণ্ঠে বিশ্বাসের মায়া ছড়িয়ে শাকিল বলেছিল, আমি আপনার বন্ধু, আমি তোমার বন্ধু, আমি তোরই বন্ধু।

তাঁর বন্ধুত্বের জালে আটকেছিল বুড়ো-জোয়ান থেকে শুরু করে তারুণ্যমাখা স্বপ্নে ডোবা মানুষেরা। আর এইসব মানুষের ব্যাকরণ ছিল তাঁর কবিতার ভাষা। রোদে পোড়া সবুজ দুর্বাঘাস মাড়িয়ে ক্লান্ত পায়ে আবার সেই মানুষের সঙ্গ পেতে শাকিল কতবার যে খুঁজেছে আপন নিলয়! হিসেব নেই। কতবার যে তৈরি করতে চেয়েছে অসীম নীলাকাশ। নিজেও জানতো না। শেষ পর্যন্ত ইচ্ছে পূরণের পেচানো সিঁড়ি বেয়ে আপন নিলয় খুঁজে না পেয়ে অভিমানে জর্জরিত হতে হতে শাকিলকে চলে যেতে হলো মন খারাপের গাড়ি চড়ে না ফেরা এক দেশের বাড়ি।

শাকিল আর আসবে না ফিরে। কিন্তু আমি জানি ময়মনসিংহের ভাটিকাশর তাঁর জন্য কাঁদে। এখানেই তাঁর শৈশবের গোল্লাছুট আর দাড়িয়াবান্ধার হৈচৈ। কিংবা ফুটবল-ক্রিকেটের উত্তেজনা। শৈশবের এ শহর তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, এ শহর আমারও। এ শহরের বৃষ্টিজল কদম ফুলের গন্ধ মাখিয়ে শাকিলকে ভিজিয়েছে। এ শহর ভিজিয়েছে আমাকেও। স্কুলের বিশাল মাঠে কোমল পায়ে যেখানে ছিল শাকিলের ছুটোছুটি। এ মাঠে আমিও উড়িয়েছিলাম স্বপ্ন- বন্ধুর সাথে, বন্ধুদের সাথে। বলছিলাম ময়মনসিংহের কথা, জিলা স্কুলের কথা।

একই শহর, একই স্কুল এমনকি একই কলেজের করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে কখনও শাকিলের সাথে স্বপ্নের কথা বলা হয়নি। কিন্তু জীবন-বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখলাম দুজনের স্বপ্ন একই- কবিতার প্রতি প্রেম। আমি বেঁধেছি প্রাণ ছড়ায়, শাকিল কবিতায়। কিন্তু কী আশ্চর্য! দু’জনেরই জীবনের কথাগুলো ভেসে আসে আমাদের ছোটবেলার সেই শহর, ময়মনসিংহ থেকে। শাকিলের কথা লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে, সত্যি! জীবন ডুবে যায় ছোটবেলার পুকুরে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা। দুরত্বের বাঁধা ডিঙিয়ে জীবন-যাপনের কাব্যময় অনুভূতি রাজধানী শহরে নতুন ব্যঞ্জনা তৈরি করল। দু’হাত বাড়িয়ে শাকিল জাপটে ধরল হাজারও বন্ধু-স্বজনকে। মানুষকে কাছে টানার এটাই কী ওর জাদুবাস্তবতা?

বিজ্ঞাপন

প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি থেকে বয়ে চলা জীবনের নানান সঙ্গতি-অসঙ্গতি, প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্য, দেশ-কাল-সমাজ-রাজনীতি সর্বোপরি প্রেমিক মনের অলিগলি পেরিয়ে নানা বর্ণের নানা ভাবের কবিতা বিলিয়ে দিয়ে শাকিল শুধু কবি হয়ে উঠেনি, হয়েছে মানবিক গুণাবলীর বিশ্বস্ত এক সাধক। আশ্রয়ের খোঁজে তাঁর কাছে গিয়েছে দিকহারা পথিকজন। কাউকে ফেরায়নি। কারণ তাঁর চেতনায় বসত করত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। যে মাতৃভূমির জন্য বর্ণমালা এনে দেন বঙ্গবন্ধু, যে মাতৃভূমির মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, সেই মাতৃভূমিকে লালন করার জন্যে শাকিলের চেতনায় কড়া নাড়ে একটি মাত্র নাম- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাইতো শাকিলের বলিষ্ঠ উচ্চরণ-

বৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে, রৌদ্র-মাখানো, ঘামে-তাতানো
জীবনের কথা জানতে গিয়ে,
তেরোশত নদীর স্রোতের ভাষা অনুবাদ করতে গিয়ে
আমার কলম থেকে বেরিয়ে আসে একটিমাত্র শব্দ- বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মানুষ আর মানুষের অনুভূতি তাঁর কবিতার বিষয়। বাংলাদেশের প্রকৃতি তাঁর হৃদয়ের ঐশ্বর্য্য। ঐশ্বর্য্যমাখা কবিতার পঙক্তিতে কতটুকুই বা স্বর্ণালী রোদ্দুর জমা করতে পেরেছে? তারপরও স্বল্প পরিসর জীবনের পাতায়-পাতায় শাকিলের কবিতায় যে শক্তিমত্তা প্রকাশ পেয়েছে, পাঠকের কাছে তাই অমূল্য। তাইতো ভালোবেসে পাঠকেরা শাকিলের জন্য চোখ ভেজায়। এখনও কোনো তুমুল আড্ডায় প্রিয়জনরা শাকিলের জন্য জায়গা রেখে দেয়। যদি আবার কাছে আসে শাকিল, যদি হাত ধরে পাশে বসে। সত্যি সত্যি যদি শাকিল বলে, কাঁদছো কেনো আমি তো এসেছি…

লেখক: শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার

আনজীর লিটন কবির মৃত্যু মাহবুবুল হক শাকিল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২ দিনে আয় ২৮৯ কোটি টাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩২

মৌসুমী হামিদের সংসার যেমন চলছে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬

সম্পর্কিত খবর