‘বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না’
৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৩৮
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ, এটি হলো আমাদের অহংকার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে উনার আদর্শকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল আর তাই দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার এগিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র চিকিৎসা সহায়ক কমিটি-এর আয়োজনে ‘বাঙালির অহংকার: বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সবচাইতে বড় শক্তি ছিল এই দেশের জনগণ। বাংলার হাটে , মাঠে, ঘাটে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সাধারণ মানুষের দু:খ, কষ্ট বোঝার চেষ্টা করেছিলেন ও সেটা লাঘবের চেষ্টাও করেছিলেন। সবকিছুকে তিনি নিজের মাঝে ধারণ করেছিলেন আর তাই তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যা মেনে নিতে পারে নি দেশ-বিদেশের অনেক অপশক্তি।
তিনি আরও বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নয় বরং হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশকেই। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে চলে অপশাসন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় এসে দেশে সুশাসনের সূচনা করেন। সেই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা আজো সক্রিয়। আর তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যার অগ্রগতির পথযাত্রাকে নিষ্কণ্টক রাখতে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে। আর সেই পথে আমরা থাকবো সহায়ক শক্তি হিসেবে যেন আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশকে উনার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ, এটি হলো বাঙালির অহংকার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও বঙ্গবন্ধু এ দুটো হলো সমার্থক শব্দ। বাঙালি জাতির পাঁচ হাজারের বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হলো মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। স্বাধীন সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়া ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, যার প্রতিফলন পাওয়া যায় ১৯৭২ সালের সংবিধানে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখনই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করবো, তখনই আমরা তার আদর্শ নিয়েও কথা বলবো। যে আদর্শের কারণে পাকিস্তানপন্থীরা তাকে হত্যা করেছে। তারা ক্ষমতার জন্য নয় বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করেছিলেন যে বিচার কাজ বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু অতি দ্রুত সময়ে বাংলাদেশকে যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান সেই সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই মুছে ফেলেছিলেন। যে কারণে ৭৫ এর পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়। এমনকি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও তারা বিতর্ক সৃষ্টি করে। অথচ এটির কোনো বৈধতাই নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা অস্বীকার করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দরকার। সেজন্য প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন করা। এ বিষয়ে আমরা আইন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আইন কমিশন ইতোমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অস্বীকার অপরাধ আইন তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে এবং সেখানে বলেছে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করবে তাদের জন্য আজীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাবো দ্রুত এই আইন কার্যকর করার জন্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। যখন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আসে তখন বঙ্গবন্ধু আপোষ করেন নাই পাকিস্তানের সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আমার দেশের জনগণের। নির্বাচনের আগে বিদেশি সাংবাদিকরা যখন বলেছিলেন উনাকে নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু তখন উনি বলেছিলেন দুইটি আসন নিয়ে কিছুটা শংকায় থাকলেও বাকি সকল আসনেই তাকেই নির্বাচিত করবে বাংলার জনগণ। সেটিই হয়েছিল। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলার। সেটিকে পূরণ হতে দেয় নি বিদেশী শত্রুরা। বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগে বিদেশীরা আমাদের হেয় করে কথা বলতো। আর এখন সমীহের চোখের দেখে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মো. মুরাদ হাসান এমপি বলেন, ইতিহাসের মহানায়ক একজনই আর তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ প্রজন্মকে জানতে হবে কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কেমন করে পাকিস্তানের কাছে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছি যারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা এই বই দুইটি পড়লে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু কত বড় মানের নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই মহান নেতার নেতৃত্বগুণ দেখার। এই ভূখণ্ডের কাদামাটিতে গড়া মানুষটা যে কী কষ্ট করে তিলে তিলে দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে গেছেন তার সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। যে মানুষ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই মানুষকে আমাদের সবার চিনতে হবে, জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জাতির পিতা যেখানে তার আদর্শে আমরা সবাই চলবো। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি ছিল আমাদের জন্য একটি অভিশপ্ত সময়। বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন ক্ষমতায় ফিরে এলেন তখন সেই দেশ হয়ে উঠলো আবার উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে। কারণ দেশ এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলছে। তাও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিষয়ে যাতে তারা কোনো ভাবেই আর মাথাচাড়া দিতে না পারে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব ( স্বপ্নীল)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়া।
তিনি বলেন, বাঙালির অহংকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সকল সদস্যের জন্যেও তিনি দিয়েছেন বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। আমি সকল চিকিৎসকদের কাছে আহ্বান জানাই যেনো মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কোনোভাবেই আমরা পিছপা না হই। উনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা.মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল রশীদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা.নুজহাত চৌধুরী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।