রাজধানীতে বিষমুক্ত সবজির হাট
৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:০৬
ঢাকা: রাজধানীতে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত অর্গানিক সবজির হাট ‘কৃষকের বাজার’। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবন প্রাঙ্গণে প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ৭টা থেকে বসবে এই হাট। যেখানে কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করা হবে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এই হাটের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে তিনি জানান ভবিষ্যতে এ ধরনের হাট রাজধানীসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশার কথা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এই হাটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বসবে এই হাট।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছোট আকারে এই বাজার শুরু করেছি। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় হবে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও এ ধরনের বাজার স্থাপনের চেষ্টা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্গানিক ফসলের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। অর্গানিক সবজির দাম একটু বেশি। নিরাপদ খাদ্যের দাম বেশি হয়েই থাকে। এখানে যে সবজি আনা হয়েছে তাতে কোনো কেমিক্যাল নেই, তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেনি।’
নিরাপদ খাদ্যের জন্য সচেতনতার বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষির উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে শিল্পের উন্নয়ন হয়। কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসহ এই শিল্পটি প্রসারিত হবে। এবছর এই হাটে ভোক্তাদের যে সাড়া পড়েছে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই হাটের আয়োজন করা হবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলার দুটি করে গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে এবং প্রতিটি জেলার বাজারে একটি করে নিরাপদ সবজি কর্নার থাকবে যেখানে কৃষকরা নিরাপদ সবজি বিক্রি করবে। এতে করে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন। ভবিষতে এ বাজার সাত দিন করে করা হবে এবং পণ্যের মানের তদারকি করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।’
কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া কৃষকের অধিকার। সরকার কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিএডিসি ৮০ হাজার কন্ট্রাকট ফার্মারের মাধ্যমে নিরাপ খাদ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আধুনিক কৃষির পথচলার শুরু।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, এফএও-এর বাংলাদেশে প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন, কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফ ও বিএডিসি’র চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ঢাকার আশেপাশের মোট আটটি উপজেলা থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত অর্গানিক সবজি নিয়ে বাজারে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথমবারের মতো তাদের পরিবহন খরচ সরকার বহন করছেন। তবে এর পরের বার থেকে কৃষকরা নিজেরা এখানে তাদের সবজি নিয়ে আসবেন। ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে, অন্যান্য বাজারের চেয়ে এখানে সবজির দাম কিছুটা বেশি। তবে উৎপাদন ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্গানিক ফসলের দাম সব সময় অন্যান্য ফসলের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেলোয়ার জাহান সারাবাংলাকে বলেন, কৃষকের বাজারে সবজির ভালোই বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু ভোক্তাদের বড় অংশই অসচেতন। তারা এখানে এসেও দরকষাকষি করেছে। তারা ফ্রেশ সবজি খোঁজে। কিন্তু ফ্রেশ মানেই যে অর্গানিক নয়, তা অনেকেই জানেন না। সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি প্রচার-প্রচারণা দরকার ছিল।
ধামরাই থেকে আসা কৃষক হান্নান হোসেন বলেন, আমাদের সবজিতে কোন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়নি। দেওয়া হয়নি কীটনাশকও। তাই দাম একটু বেশি। বেচাকেনা ভালো হয়েছে বলেই জানান তিনি। সাভারের হেমায়েতপুরের কৃষক মনির হোসেন বলেন, বিক্রিতে আমরা সন্তুষ্ট। আগামীতেও বাজার আরও জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছি।
এদিকে, সকাল সাড়ে এগোরটার মধ্যে বেশিরভাগ দোকানের সবজি শেষ হয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর সেচ ভবনে এই হাট বসবে।