ডিসি হিলের ফটক বন্ধ, ক্ষোভ নবান্ন উৎসবের মঞ্চে
৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবহমান বাংলার ঢোলবাদন, বাউল গান, শিশুদের নাচ-গানসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রাম নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে নবান্ন উৎসব। গ্রামবাংলার আবহমান এই সংস্কৃতিকে নগরজীবনে উৎসবের আমেজে ফিরিয়ে এনেছে ছোটদের সাংস্কৃতিক জগৎ ‘শিশুমেলা’।
সংগঠনটি পঞ্চমবারের মতো শুক্রবার নগরীর জেএমসেন হল প্রাঙ্গণে ‘নবান্ন উৎসব ১৪২৬’ আয়োজন করে। প্রতিবছরের মতো এবারও গ্রামবাংলার তিনজন প্রান্তিক কৃষক হারুনুর রশিদ, মো. সোহেল এবং সোলায়মান চৌধুরী বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।
প্রতিবছর নগরীর ডিসি হিল প্রাঙ্গণে নবান্ন মেলার আয়োজন হলেও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সেখানে সাংস্কৃতিক আয়োজন গত প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ আছে। আমলাতান্ত্রিক বাধায় ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে না পারার ক্ষোভ উঠে আসে নবান্নের মঞ্চে। চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অতিথিদের বক্তব্যে বারবার এসেছে ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করতে না পারার হতাশার কথা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নবান্ন উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটা আমাদের ঐতিহ্যের সংস্কৃতির অংশ। নতুন প্রজন্ম যারা শহুরে জীবনে বেড়ে উঠছে তারা হয়ত এর সাথে এত পরিচিত নয়। এ ধরনের আয়োজন যত বেশি হবে, আমাদের নতুন প্রজন্ম বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টির সাথে তত বেশি পরিচিত হবে।’
‘একসময় এ আয়োজন ডিসি হিলে হতো। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ডিসি হিল একসময় সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, কেন জানি না এক ধরনের বাধার কারণে সেটা ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে তো বেশি সুযোগ নেই, উন্মুক্ত স্থানও নেই। প্রায় সবধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এখানে হতো। বছরে এখন দু’চারটি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান পরিচালিত না হওয়ায় ডিসি হিল অনেকটা জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। যে সমস্ত কারণে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় তার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করব।’
নবান্ন উৎসব উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ডিসি হিলে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বইমেলা হতো। যে কোনোভাবে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতার নামে। মেয়রের কাছে দাবি জানাই, ডিসি হিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে ব্যবস্থা নেবেন।’
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যখন বিস্তৃত করা দরকার তখন কেন জানি আমরা পেছনের দিকে হাঁটছি। ডিসি হিলে কেন সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ হয়ে গেল? আজ মেয়র মহোদয় বলেছেন, প্রয়োজনে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মেয়রের নেতৃত্বে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। কোন বাধায় আটকে আছে তা আমরা অপসারণ করতে চাই। সামনে মুজিববর্ষ, চট্টগ্রামে মুজিববর্ষ আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু যেন ডিসি হিল হয় সে উদ্যোগ নিতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ, প্রবীণ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, মেলা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক প্রণব বল ও সমন্বয়ক রুবেল দাশ প্রিন্স।
বক্তব্য পর্বের পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নাচ ও গান পরিবেশন করে। উৎসবের শেষ পর্বে ছিল বাউল গুরু পাগলা বাবলু এবং বাউল শিল্পী জলি মণ্ডলের পরিবেশনা।