Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা কমেছে, কমেনি রোগের শঙ্কা


৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:৫৯

ঢাকা: অতীতের সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী আরও ১৮ বছরে যেখানে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ১৪৮ জন, সেখানে চলতি বছরের আগস্টেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৭০ হাজার ১৯৫ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে এই সংখ্যা কমে এলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমেরপরিসংখ্যান অনুযায়ী আগস্টে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এই সংখ্যা কমে আসে পরবর্তীতে। সেপ্টেম্বরে ১৭ হাজার ৭৫৭ জন, অক্টোবরে ৮ হাজার ১৪৬ জন ও নভেম্বরে ৪ হাজার ১১ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা কমে এলেও বাংলাদেশে এখনো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিষয়ে শংকামুক্ত বলা যাবে না। আর এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে ডেঙ্গুর জন্য এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়াকে দায়ী করছেন। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সেটি বছরজুড়ে চালু রাখা না গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দস্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এ কথা বলা যাবে না। কারণ ঢাকার বাইরে এখনো ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কিভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই বিষয়ে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতর বৈঠক করেছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধের কর্মকৌশল নির্ধারণের জন্য।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ জুলাই আগস্ট মাসের মতো নেই। সংখ্যাগত দিক থেকে অনেক কমে এসেছে রোগীর সংখ্যা। তবে আমাদের অনেকেই ভেবে নিচ্ছে যে, এই রোগ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে যেখানে সেখানে আবার দেখা যায় পানি জমে আছে। বৃষ্টির পানি না হলেও অন্যান্য পানি জমা থাকছে বিভিন্ন স্থানে। আর এক্ষেত্রে এডিস মশার অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করছে। সচেতনতার স্থানেও কিছুটা ঢিলে ভাব দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ যখন বেশি ছিল তখন সিটি করপোরেশনগুলো যেভাবে জোরালোভাবে কাজ করছিল সেখানেও কিছুটা ভাটা দেখা যাচ্ছে। যার কারণে আমরা অক্টোবর পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনার কথা বললেও ডেঙ্গু নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শীত যদি ডিসেম্বরে না আসে তবে ডেঙ্গু কিন্তু আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম ধরে রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ডিন ও মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে এটা একটি ইতিবাচক দিক অবশ্যই। কিন্তু এতে রিল্যাক্স হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। ভবিষ্যতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এ এস এম মশিউল আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো ডেঙ্গু রোগের রোগী পাচ্ছি। তবে সংখ্যা কমে গেছে অনেক পরিমাণে। আগে যেখানে আমরা প্রতিদিন ৫০ জন নতুন রোগী পেতাম এখন সেই পরিমাণে না পেলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেকেই নতুন ভাবে ভর্তি হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগটাকে আসলে এখন আর কোনো নির্দিষ্ট মাসে সীমাবদ্ধ করে রাখার উপায় নাই। কারণ এডিস মশা কিন্তু বংশবিস্তার এখন প্রায় পুরো বছরই করে। আর তাই রোগীর সংখ্যা কমে আসলেও একেবারেই শঙ্কা কমে গেছে এমনটা বলা যায় না। আর এই শঙ্কার কথা মাথাতে নিয়েই বছরব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি চালু রাখতে হবে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, এটা আমরা বলতে পারি। কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এটা বলা যায় না। আর তাই শঙ্কামুক্ত হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। এই মৌসুমে আরেকটা পিক মোমেন্ট আসার সম্ভাবনা হয়তো নেই। কিন্তু সেই সম্ভাবনা যাতে আর না দেখা দেয় সেজন্য আমাদের বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এই কর্মসূচি কোনো ভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকেও মনিটরিং করতে হবে।’

রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের জন্য এডিস ইজিপটি মশা দায়ী হলেও এবার বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পাওয়া গেছে এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশা। আর এই প্রজাতির মশা এডিস ইজিপ্টির চাইতে একটু ভিন্ন। এডিস ইজিপ্টি ঘরে বা ঘরে বাইরে থাকা স্বচ্ছ পানিতে বংশবৃদ্ধি করলেও এডিস এলবোপিকটাস বেশি থাকে ঝোপঝাড়ে, গাছের কোটরে বা বাঁশ কাটার পর সেখানে থেকে যাওয়া গোড়ায় জমা পানিতে।

রাজধানীর বাইরে এবার যে সব স্থানে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে তাতে এই প্রজাতির মশাও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এমন অবস্থায় এখনো দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআরবির গবেষক আতিক আহসান।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন বৃষ্টি হচ্ছে না তাও কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যদি বৃষ্টি হয় তবে এই সংখ্যা আবার বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন রোগী থেকেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে আমরা শঙ্কামুক্ত এটা বলা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এবারই প্রথম ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়ন পর্যায়েও। এটি এখন আর সিটি করপোরেশনে সীমাবদ্ধ নেই। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ণয় করা দরকার ছিল সবখানেই। যাতে করে পরবর্তী মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। অথচ এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে আমরা তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখিনি। আর এজন্য আমরা কিন্তু বিশাল বিপদেও পড়তে পারি আগামী ডেঙ্গু মৌসুমে।’

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়গুলো খুব দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৫২৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯৯ হাজার ৮৭৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮৫ জন।

এছাড়াও চলতি বছর ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১২৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

আইসিডিডিআর এডিস মশা ডেঙ্গু বিএসএমএমইউ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শিশু হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতর হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর