‘মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দলটির হাতেই গণতন্ত্র নিহত’
৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:০৫
ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিষয়টি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বার বার এই গোষ্ঠী, এই মহল এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই দল— যারা মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের হাতেই বারবার গণতন্ত্র নিহত হয়েছে।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) এমন মনোভাব ব্যক্ত করে যে, মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ঠিকাদারিত্ব তাদের। এখন তারা স্বাধীনতাযুদ্ধের যে ইতিহাস বলে, তা সম্পূর্ণ বিকৃত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্র তারা নিজেরা বারবার ধ্বংস করেছে।’
তিনি বলেন, `আমরা কেউ ভুলে যাইনি ১৯৭৫ সালের এক দলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার কথা, আমরা ভুলে যাইনি সেই সময় সবদল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, সমস্ত পত্র-পত্রিকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, জনগণের মতপ্রকাশের যে অধিকার, সেই অধিকারকে খর্ব করা হয়েছিল।’
‘আজকে আমরা আবারও দেখিছি, ‘২০০৮ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকে সেই একই কায়দায় তারা জনগণকে প্রতারণা করে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতায় বসে আছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যে নেত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন, এখনো তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সেই দল, যারা স্বাধীনতার স্বপ্ন বার বার ভেঙে দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সেই নেত্রী আজ যখন কারাগারে, তখন এই বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
‘আইনজীবীদের হট্টগোল ক্ষমার অযোগ্য’— খালেদা জিয়ার মামলা শুনানিকালে বিএনপি আইনজীবীদের বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সংসদ সদস্য ও সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর আদলতে আওয়ামী আইনজীবীদের হট্টোগোলের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ওই দিন চিফ জাস্টিজের কক্ষসহ সুপ্রিম কোর্টে ভাংচুর হয়, আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের ভেতর বস্তি বসানো হয়। সুতরাং খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কর্মকাণ্ড যদি ক্ষমার অযোগ্য হয়, তাহলে আপনাদের ওইসমস্ত তাণ্ডব ক্ষমা পেল কী করে?’
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে আপনারা যে জঘন্য নাটক করছেন, সেই নাটক বাদ দিয়ে দয়া করে একজন দেশপ্রেমিক নেতা, গণতন্ত্রের সব চেয়ে বড় নেতা, জনপ্রিয় নেতা, তার জীবন রক্ষার জন্য দয়া করে নাটক বাদ দিয়ে তাকে জামিনে মুক্ত করুন এবং তাকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসার সুযোগ করে দিন। অন্যথায় এ দেশের মানুষ কোনো দিন আপনাদের ক্ষমা করবে না। তখন আপনারাই ক্ষমার অযোগ্য হবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, হাবীব উন নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খানসহ অন্যরা।