Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আদালতকে রণাঙ্গন বানিয়ে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখবেন না: কাদের


৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটা ধাক্কা দিলেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বিএনপির বিষোদগারে আওয়ামী লীগের পতন হবে না। চক্রান্ত করে টেমস নদীর ওপার থেকে নাশকতার নির্দেশ নিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আদালত অঙ্গনকে রণাঙ্গন বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কেউ দেখবেন না, সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হবে।’

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী মাঠে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কথায় কথায় পতন চান, কথায় কথায় পদত্যাগ চান। কার পদত্যাগ আপনারা চান? আপনারাই পদত্যাগ করুন। ১০ বছরে ১০ মিনিটও রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেননি। দুই বছর খালেদা জিয়া কারাগারে, দুই মিনিটও রাস্তায় দাঁড়াতে পারেননি। আপনারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতনের স্বপ্ন দেখলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি ঘরে বসে আঙ্গুল চুষবে? ক্ষমতা যদি চান, আরেকটা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। নির্বাচনই পারে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে।’

গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিরোধীদল চাই। তবে বিরোধিতার নামে নাশকতা করলে সেটা সহ্য করব না।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তার আইনজীবীরা হট্টগোল করেন। এসময় প্রধান বিচারপতি এজলাসে ছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন।

বক্তব্যের শুরুতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্লোগান দিয়ে নেতা বানানো যাবে না। বিলবোর্ডে বড় বড় ছবি দিয়ে, পোস্টারে ঝকঝকে ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। মাস্তানি করে নেতা হওয়ার দিন শেষ। নেতা হবে দলের ত্যাগীরা, যারা দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। সুখে-দুঃখে যারা দলের সঙ্গে ছিল, তারাই হবেন নেতা। আমরা কি স্লোগান শুনে নেতা বানাব?’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে যাদের নামে বেশি পোস্টার-বিলবোর্ড-স্লোগান দেখা গেছে, তাদের একজনও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। পরিস্কারভাবে বলতে চাই- আওয়ামী লীগে খারাপ লোকের প্রয়োজন নেই। বুয়েটে আবরারকে যারা খুন করেছে, রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে যারা পানিতে ফেলেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কথায় কথায় মারামারি করে, এমন নেতাকর্মীর দরকার আওয়ামী লীগে নেই। মাস্তানি-গডফাদারগিরি করে নেতা হওয়া যাবে না।’

‘অনেক কর্মী দীর্ঘদিন দল করে, কিন্তু কমিটিতে পদ পায় না। অনুপ্রবেশকারীরা এসে বড় বড় পদ দখল করে। ত্যাগী কর্মী ছাড়া সুবিধাবাদীরা এসে যদি বড় বড় পদ দখল করে, তাহলে আওয়ামী লীগ টিকবে না। জনগণের কাছে জনপ্রিয় এবং কাউন্সিলরদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নেতা বানাতে হবে’, যোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগে এখন অনেক নেতা, কর্মী কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের বিশাল কারখানা। কর্মী উৎপাদনের কারখানা ছোট হয়ে গেছে। এখন পোস্টার-ব্যানার লাগানোর জন্য কর্মী পাই না। হ্যান্ডবিল বিলি করার জন্য কর্মী পাই না। কর্মীরা সব নেতা হয়ে গেছে। মুই কি হনুরে ভাব। আমি নেতা, আমি পোস্টার লাগাব কেন- এমন ভাব তাদের মধ্যে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “কত টাকার দরকার যে চাঁদাবাজি করতে হবে? চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের নেতা হতে পারে না। টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, জমি দখলকারী, সন্ত্রাসীদের আওয়ামী লীগে ‘না’ বলুন। দাপট দেখাবেন না। শুদ্ধি অভিযান স্তিমিত হয়ে যায়নি। সবই নজরদারিতে আছে। কখন জালে কে ধরা পড়বেন, সুতরাং সাবধান।”

পদ না পেলে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটিতে একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সেক্রেটারি হবেন। অনেক প্রার্থী আছেন, যারা হতে পারবেন না, তারা হতাশ হবেন না। আওয়ামী লীগে কারও অবমূল্যায়ন হয় না। ২-১ জন আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, এবার যদি পদ না পায়, তাহলে নাকি আত্মহত্যা করবেন। আত্মহত্যা করে কাপুরুষরা। রাজনীতি করে কালপুরুষরা। কাপুরুষরা রাজনীতিতে কখনো সফল হতে পারে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আমরা ২১ বছর পাইনি। যে আদালতে গেছি, সেই আদালত বিব্রতবোধ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আমাদের ৪৩ বছর লেগেছে। আমরা তো আদালতে ভাঙচুর করিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের তো আমরা চাইলে গুলি করে মারতে পারতাম, আমরা তো সেটা করিনি। আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি সেটা সহ্য করতে পারছে না। কারণ ১০ বছর সাজা খেটে বেরিয়ে আসার পর খালেদা জিয়ার আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হবে না।’

সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কমিটিতে পদ পেলে চাঁদাবাজি করবে, এমন লোক আমরা চাই না। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদরা যেন কমিটিতে আসে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় হাজিরার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ১০৮ বার সময় নিয়েছেন। তারা যদি ১০০ বার সময় নিতে পারেন, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলি মাত্র একবার সময় নেওয়ার পরই তারা আদালতে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। মাত্র এক সপ্তাহ জামিন শুনানি পিছিয়েছে, তাতেই তারা এত ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন? এতে প্রমাণ হয় বিএনপির আইন-আদালতের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। আশা করি আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জামিন চাইতে গিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চে যেভাবে হাঙ্গামা করেছে, দেশের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পেছানোর কারণে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন হলে তারা আরও কি কি ঘটাবেন তা অনুমেয়।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বিএনপি এখন মিডিয়াভিত্তিক দলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পল্টনে বসে ক্যামেরার সামনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ছাড়া বিএনপি নেতাদের আর কোনো কাজ নেই। তাদের নেতা তারেক রহমান ক্ষমতায় থাকার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র এনেছিল আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা আর এই তারেক রহমানকে দেখতে চাই না। তাকে বাংলাদেশের মাটিতে অবাঞ্ছিত করেছে জনগণ। তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে চট্টগ্রামের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।’

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের পরিচালনায় উদ্বোধনী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

এর আগে, শনিবার সকালে সম্মেলনের শুরুতে মাঠে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও মারামারি হয়। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর সম্মেলনস্থল ঘিরে পুলিশ অবস্থান নেয়। সম্মেলনের শেষপর্যায়ে মঞ্চের সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের মূল কাউন্সিল চলছে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন টপ নিউজ সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর