‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু, ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা
৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চিকিৎসকের অবহেলায় মায়ের গর্ভে সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহানের আদালতে মামলাটি করেছেন প্রসূতির স্বামী আইনজীবী মো. ইউসুফ আলম মাসুম।
মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ম্যাক্স হাসপাতালের কনসালটেন্ট আফরোজা ফেরদৌস, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন চমেক হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও আলট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে কর্মরত ডা. এ এইচ এম রকিবুল হক এবং ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. লিয়াকত আলী খান।
মামলার আরজিতে বাদী ইউসুফ আলম অভিযোগ করেছেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল থেকে বাদীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) চিকিৎসক আফরোজা ফেরদৌসের তত্ত্বাবধানে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৫ মে’র ইউএসজি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১১ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবরের ইউজিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হয় ১৭ ডিসেম্বর। গত ২৮ অক্টোবরও আফরোজ ফেরদৌসের কাছে স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করান বাদী।
গত ১ ডিসেম্বর শারমিন আক্তার পেটে ব্যথা অনুভব করলে বাদী তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবারও চিকিৎসক আফরোজা ফেরদৌসের কাছে নিয়ে যান। বাদী সশরীরে পরীক্ষা করে ও ইউজিসি প্রতিবেদন দেখে ওষুধ লিখে দিয়ে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এসময় বাদী ও তার স্ত্রী বারবার ব্যথা অনুভবের বিষয়টি জানালেও চিকিৎসক আফরোজা গুরুত্ব না দিয়ে ১৭ ডিসেম্বর ডেলিভারি হবে বলে জানিয়ে দেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওইদিনই বাদী পুনরায় তার স্ত্রীকে ম্যাক্স হাসপাতালের ল্যাবে ডা. এইচ এম রকিবুল হকের কাছে নিয়ে যান। রকিবুল ইউজিসি প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং গর্ভে বাচ্চার অবস্থান ঠিক আছে বলে বাদীকে জানান। বাদী স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাতে এলজিন ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খাওয়ান। ২ ডিসেম্বর বাদী আবারও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ইউজিসি প্রতিবেদন তাকে দেখান।
পরদিন ৩ ডিসেম্বর শারমিন আরও তীব্র ব্যথা অনুভব করলে বাদী তাকে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক সুমাইয়া রফিকের তত্ত্বাবধানে শারমিন মৃত ও গলিত কন্যা সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসক সুমাইয়া বাদীকে জানান, একদিন আগেই গর্ভে ওই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
বাদীর অভিযোগ- আফরোজা গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা না করায় এবং মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে রকিবুল ইউজিসি প্রতিবেদন তৈরি করায় সঠিক চিকিৎসা ও ইউজিসি প্রতিবেদনের অভাবে গর্ভে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ম্যাক্স হাসপাতালকে অদক্ষ এবং অধিক মাত্রায় বাণিজ্যিক মনোভাবাপন্ন বলে উল্লেখ করে মামলার আরজিতে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার আরজিতে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক)/১০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদী ইউসুফ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যথা অনুভবের পর আমার স্ত্রীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যায়, তখন যদি সঠিক চিকিৎসা পেতাম, তাহলে আমার সন্তানের মৃত্যু হত না। আদালত আমার বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন। পিবিআইকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে নগরীর মেহেদিবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে বেশ কয়েকটি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে দুটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর লেখিকা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহছেনা আক্তার ঝর্ণার এক বছর ২৪ দিন বয়সী ছেলে জিহান সরোয়ার প্রিয় ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঝর্ণার অভিযোগ- চিকিৎসায় প্রায় সুস্থ হয়ে তার ছেলে খেলছিল। একটি ইনজেকশন পুশ করার আধাঘণ্টার মধ্যে আকস্মিকভাবে ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ বিষয়ে তিনি ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ করেছেন।
গত বছর একই হাসপাতালে জ্বর ও গলাব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া সাংবাদিক রুবেল খানের শিশুকন্যা রাফিদা আক্তার রাইফা’র মৃত্যু হয়। তখন ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দায়ী চিকিৎসকদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন সাংবাদিকরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিম হাসপাতালে অভিযানও চালিয়েছিল।