Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহবান


৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩১

ঢাকা: ৩৯তম বিশেষ (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ হাজার ৪৪৩ জন চিকিৎসককে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ৩৯তম বিশেষ (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ থেকে শুরু হলো নতুন পথচলা। সামনে অনেক কাজ। বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায় পদায়ন করা হয়েছে আপনাদের। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাস করে জেলা-উপজেলাগুলোতে। তাদের সকল দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। সব জায়গাতে সকল কিছুই মনের মতো হবে না। অনেক জায়গাতে ঘাটতি থাকতে পারে। সুবিধা-অসুবিধা সব মিলিয়েই আপনাদের কাজ করতে হবে। সকল ঘাটতি মেনেই আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ যারা যোগদান করলেন সেটার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। আড়াই বছর আগে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসে আমাদের চিকিৎসক সংকটের কথা বলেছিলাম। তিনি জানতে চেয়েছিলেন কতজন নিয়োগ দিলে এই সংকট কাটবে? আমি বলেছিলাম আট থেকে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিলে মোটামুটিভাবে সংকট কাটবে। তিনি এ কথা শোনার পর বলেছিলেন ফাইল পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। এ কথার শোনার পরদিনই চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেই। পরে দুদিনের মধ্যেই ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের ফাইলে সই করেন তিনি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো বাধাই বাধা নয়, যদি লক্ষ্য ঠিক থাকে। আপনাদের লক্ষ্য হলো এই বাংলার দুঃখী মানুষের সেবা দেওয়া। সেজন্য আপনাদের যা প্রয়োজন তা এখনই দিয়ে দিতে পারবো এমন প্রতিশ্রুতি হয়তো আমরা দিতে পারছি না কিন্তু ন্যূনতম যা প্রয়োজন তা আমরা করে দেবো। পর্যায়ক্রমে সব ব্যবস্থাই করে দেওয়া হবে। মানুষ মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে এসে যেনো না দেখে সেখানে চিকিৎসক নেই, তাকে যেনো অন্য হাসপাতালে ছুটে যেতে না হয়। এই পরিস্থিতি আমরা দেখতে চাই না।’

বিজ্ঞাপন

প্রতি উপজেলায় চিকিৎসকদের জন্য গাড়ি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে। যখন দেশে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তখন চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসকরাই মানুষের বিপদের বড় বন্ধু। গ্রামের লোক যদি ভালো না থাকে, তাহলে শহর ভালো থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সকল খাত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নেও দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে গেছে। জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলো বেডের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে, যুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। বাংলাদেশ এখন পোলিওমুক্ত, টিটেনাসমুক্ত একটি মধ্যম আয়ের দেশ।

তিনি বলেন, জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়তে সুস্থ সবল জাতি দরকার। সেটার কারিগর চিকিৎসকরা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করে উন্নত দেশের কাতারে যেতে স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চিকিৎসকদের সেবা দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর যদি জন্ম না হতো, তাহলে এদেশ স্বাধীন হতো না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। যদি মনে করো, চাকরি পেয়েই দায়িত্ব শেষ, সেটা হবে না।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দিন রাত ২৪ ঘণ্টা দেশের সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যিনি তোমাদের (চিকিৎসক) জন্য এত কিছু করছেন, তিনি তোমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসকরা গ্রামে গিয়ে মেহনতী মানুষকে সেবা দেবে। চিকিৎসকদের জনগণকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ভারত দেশ হিসেবে বড় হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবায় গোটা পৃথিবীতে রোল মডেল।

৩৯তম বিশেষ (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা সচিব আসাদুল ইসলাম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব এম এ আজিজ। এছাড়া বিশেষ বক্তব্য রাখেন ৩৯তম বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় প্রথম হওয়া চিকিৎসক ডা. নিলীমা ইয়াসমিন।

উল্লেখ্য, ১৯ নভেম্বর ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৪ হাজার ৪৪৩ জনকে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে সহকারী সার্জন পদে ৪ হাজার ২০৩ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ২৪০ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চিকিৎসক নতুন নিয়োগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর