Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত সরকারি কলেজের পড়াশোনা


৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:১৭

ঢাকা: ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে বর্তমানে অনার্স ও এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তের হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৮৯ জন। এদের মধ্যে আবার শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেওয়া শিক্ষকদের হিসাব ধরলে সংখ্যাটি নেমে আসবে পঞ্চাশের কোঠায়।

উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য এই কলেজে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস না করেই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে প্রথম বর্ষ। দ্বিতীয় বর্ষে যাও বা একটু ক্লাস হয় তা এইচএসসির বিশাল সিলেবাস শেষ করার জন্য অপ্রতুল। একই অবস্থায় শিক্ষা জীবন শেষ করছেন ডিগ্রি ও অনার্সের শিক্ষার্থীরাও।

বিজ্ঞাপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষাদানের এই চিত্রকে মাপকাঠি ধরলে দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি কলেজে শিক্ষাদান এখন এই অবস্থায় চলছে। শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সরকারি কলেজের শিক্ষার মান। নতুন চালু হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে এখনও কোনো শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ইংরেজি, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, পদার্থ, রসায়ন, গণিতের মত বিভাগগুলোতেও পুরো সিলেবাস পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই দেশের বেশির ভাগ কলেজে। ফলে এক বিষয়ের শিক্ষককে বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে অন্য বিষয়ের ক্লাস। আর এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।

সারাদেশে বর্তমানে ৩২৯টি পুরনো সরকারি কলেজ আছে। এসব কলেজে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী, সহযোগী ও পূর্ণ অধ্যাপকের শূন্য পদের সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পক্ষ থেকে ১২ হাজার ৫২৯টি শিক্ষক পদ তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কলেজ শাখার পরিচালক শাহেদুল খবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরনো সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট আগে থেকেই প্রকট। সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আমরাও করছি। শিক্ষক সংকট কমাতে ২০২০ সালে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস আয়োজনের পরিকল্পনাও করছে সরকার।’

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ বিসিএস আয়োজন করতে সরকারি কর্ম কমিশন বা পিএসসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ বিসিএসটি হয়ে গেলে আগামী দুবছরের মধ্যে আড়াই হাজারের মতো নতুন শিক্ষক পাবে কলেজগুলো। তখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কমে আসবে।

বিষয়টি নিয়ে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষক সংকটের জন্য তিনি মন্ত্রণালয় ও মাউশির উদাসীনতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি কলেজে পদ সৃষ্টি অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে। একারণে ঠিক মতো পদায়নও হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় ও মাউশি যদি উদাসীন না থাকত তবে এই পরিবেশ সৃষ্টি হত না। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের শিক্ষার স্বার্থ বিবেচনা করে হলেও দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।’

এ ব্যাপারে মাউশি মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষক সংকট সমাধানের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। কিন্তু এটা এমন ছোট বিষয় নয় যে রাতারাতি সমাধান করে ফেলা যায়। সময় লাগবে এবং সংকটও কেটে যাবে।’

এদিকে, ৪১তম বিসিএস থেকে ৯০৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে সরকারি কলেজে। এছাড়া এখনও ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এবং ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ বাকি। এ দুটো পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে সেখান থেকেও ১৬০০-এর বেশি শিক্ষক পাওয়া যাবে। তবে এরা নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত খণ্ডকালীন কিছু শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আপাত সংকট কাটানোর চেষ্টা করছে বেশ কয়েকটি কলেজ। এ ব্যাপারে মাউশির পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানা গেছে।

শিক্ষক সংকট নিরসন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘গত এক বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেওয়া, প্রশ্নফাঁস রোধ এবং কলেজ সরকারিকরণের মতো শিক্ষক সংকটও নিরসন করা হবে। দেশের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করতে হলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সামর্থ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

বিপর্যস্ত সরকারি কলেজের পাঠদান শিক্ষক সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর