Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চীনের অতিথি ভবনে হাতাহাতি, মামলা শুধু অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে


৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:২২

ঢাকা: চীনের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে ১৭ নম্বর ভিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহকারীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তার বচসা ও হাতাহাতির ঘটনায় কেবল অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছে মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত ওই অফিস সহায়ক বলছেন, ওই ঘটনায় তার সঙ্গে অপ্রত্যাশিত আচরণ করা হয়েছে এবং কর্মকর্তারা তার ওপর অযৌক্তিকভাবে চড়াও হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বলছেন, ওই ঘটনায় কর্মকর্তাদের আচরণ গ্রহণযোগ্য ছিল না। তা সত্ত্বেও গত ১ ডিসেম্বর কেবল অফিস সহকারীর বিরুদ্ধেই মামলা (১৫/২০০৯) করেছে মন্ত্রণালয়।

গত ১ থেকে ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। সফরে চীনের ওই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনেই অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের বাইরে অতিথি হিসেবে সফর করেন, তখন ওই সফরটি দেশের ভাবমূর্তিসহ সার্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ওই সময়ের নিরাপত্তার বিষয়টিও খুব স্পর্শকাতর। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান বা তার আশপাশে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী ও কর্মকর্তদের মধ্যে দায়িত্ব পালন নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে এ ধরনের যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।

সারাবাংলা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পর গত ৯ জুলাই ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্তৃক নিম্নস্বাক্ষরীকে অপদস্থকরণ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক একটি আবেদন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) বরাবর দাখিল করেন একজন অফিস সহায়ক।

আবেদনে তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষে প্রটোকলের অগ্রগামী দল হিসেবে ঢাকা থেকে একজন পরিচালক (তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না) গত ২৪ জুন রাতে বেইজিং পৌঁছান। সেখানে পৌঁছানোর পর থেকেই তিনি ওই অফিস সহায়কের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখাতে থাকেন। ৫ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের ভিলা ১৭ থেকে সব কর্মকর্তার লাগেজ সংগ্রহের পর ওই অফিস সহায়ককে ১০ নম্বর ভিলার সব লাগেজও সংগ্রহ করতে বলা হয়। এসময় ওই অফিস সহায়ক ‘ব্যাকপেইনে’র কথা জানিয়ে তার সঙ্গে আরও একজনকে দিতে অনুরোধ জানালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওই পরিচালকসহ তিন কর্মকর্তা তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তার কলার চেপে ধরে তার ওপর চড়াও হন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই অফিস সহায়ক।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনার পর বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সচিব মো. খায়রুল বাশার গত ৯ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় তিনি বলেন, ‘পরিচালক স্যার অফিস সহকারীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে আমার সামনেই অফিস সহকারীর কলার চেপে ধরেন। আমি উপস্থিত সবাইকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ জানাই। বিষয়টি অত্যন্ত আকস্মিকভাবে ঘটে, যা আমাকে বিস্মিত ও বাকরুদ্ধ করেছে।’

একই বার্তায় ওই সময়ের চীনের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে কর্মকর্তাসূলভ আচরণ নয় এবং গ্রহণযোগ্য নয়। পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যেতে পারে।’

অফিস সহকারীর আবেদন এবং দূতাবাসের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার বার্তা সত্ত্বেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল অফিস সহকারীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২-এর উপবিধি (ঘ) অনুযায়ী গত ১ ডিসেম্বর ওই অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলার অভিযোগের বিবরণীতে বলা হয়, ভিভিআইপি সফর চলাকালীন সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত চীনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে একজন অফিস সহকারী পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে তা একজন সিনিয়র সচিবের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ওই অফিস সহকারীকে পরবর্তী দিনের অনুষ্ঠানসূচি/নির্দেশমালা বিতরণের নির্দেশ দিলে তিনি তা শেষ না করে চলে যান। সফর চলাকালে ওই অফিস সহকারীই প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের ছবি তুলতে চাইলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) একজন কর্মকর্তা তাকে বাধা দিলে তিনি তাকে অগোচরে তাকে রাজাকার বলে সম্বোধন করেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করার হুমকি দেন।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পাশের রুমে অবস্থান করার পরও সহকারী সচিব ওই অফিস সহকারীকে ডাকলে তিনি তার উত্তর দেননি এবং তাকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের লাগেজ সংগ্রহ করতে বললে তিনি তা করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান এবং উদ্ধতভাবে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনে কক্ষ ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে একজন সহকারী সচিব তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি তার সঙ্গে অশালীন আচরণ ও আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি করেন।

ছবি: বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস

চীনের অতিথি ভবন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় সফর হাতাহাতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর