ভ্যাট ফাঁকি রোধে আসছে ইএফডি ও সফটওয়্যার
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:১৩
ঢাকা: দেশে যেভাবে শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সে তুলনায় রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় প্রবণতায় রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেজন্য ভ্যাট ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইজ (ইএফডি) বসানো, সফটওয়্যার তৈরি এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী করাসহ নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আহরণ অনেকাংশে বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইএফডি ব্যবহার, ভ্যাটদাতা বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি, ব্যাংকে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে সফটওয়্যার বসানো, বাৎসরিক অডিট, প্রিভেনটিভ কার্যক্রম সক্রিয়, এটি (অ্যাডভ্যান্স ট্যাক্স) বাধ্যতামূলক করা, নিরীক্ষা দফতরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বড় ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য এনবিআর বিশেষ ভ্যাট সফটওয়্যার তৈরি করেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এই সফটওয়্যারটি ব্যবহারের অনুমোদনও চেয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকার উপরে তাদের এই সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি চালু হলে প্রতিষ্ঠানের বেচাকেনা, স্টক, পেমেন্টসহ যাবতীয় তথ্যাদি কম্পিউটারে সংরক্ষিত হবে। এছাড়া এই সফটওয়্যারের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি নিরাপদ এবং অডিটিংয়ের মাধ্যমে যথাযথ ভ্যাটের হিসাব বের করতে উপযোগী। এটি চালু হলে কোনো তথ্য বিকৃত করা সম্ভব নয়।
এনআরবি সূত্রে আরও জানা যায়, এরই মধ্যে ইএফডি মেশিন কেনার প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই ১০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন সরবরাহ করা হবে। মেশিনগুলো বসানোর পর ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নতুন আইনে ভ্যাট আদায়ে বেগ পোহাতে হবে না। এছাড়া কেউ ভ্যাটও ফাঁকি দিতে পারবে না। এনবিআর ২৪ ক্যাটাগরিতে ইএফডি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই যন্ত্রের সুবিধা হচ্ছে, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভারে সরাসরি যুক্ত থাকবে। ফলে কেউ ইচ্ছা করলেই প্রকৃত ভ্যাটের হিসাব লুকাতে পারবে না।
এনআরবি সূত্র জানায়, ব্যাংকে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে বসানো হবে সফটওয়্যার। সেটি নিয়ে এখন কাজ চলছে। দ্রুতই এই সফটওয়্যারটির কাজ শেষ হবে। আর এটি হলে ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন এনবিআরের সার্ভারে যুক্ত থাকবে। ফলে কোনো ব্যাংক ভ্যাট ফাঁকি দিতে পারবে না। কিংবা হিসাবেব তথ্যে গরমিল করতে পারবে না। সেইসঙ্গে নতুন ভ্যাট আইনে বাৎসরিক অডিট ও প্রিভেনটিভ কার্যক্রম জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এর মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে কিনা সেটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত হতে বিশেষ কমিটিও করা হয়েছে।
অন্যদিকে এটিভি (অ্যাডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট) আইনে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট মওকুফ পেত। সেটি সংস্কার করে ফাঁকি রোধে এটি (অ্যাডভ্যান্স ট্যাক্স) করা হয়েছে। এছাড়া নতুন আইনে নিরীক্ষা দফতরকে শক্তিশালী করা হয়েছে। আগে নিরীক্ষা দফতর থাকলেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু নিরীক্ষা কার্যক্রম এখন আরও বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে। এতে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা যাবে। ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে যেসব বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। এই মুহূর্তে নতুন ভ্যাট আইনের প্রধান কাজ হচ্ছে, সবাইকে অনলাইনে আনা। সেইসঙ্গে ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস বা ইএফডি দ্রুত ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছানো। কেননা দেরী হলেই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সুতরাং যত দ্রুত এনবিআর নতুন আইনের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে ততই ভালো।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে অনেক কিছু সংযোজন হয়েছে। সবাইকে আনা হচ্ছে অনলাইনে। ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসবে। এছাড়া নতুন আইনে নিরীক্ষা দফতর শক্তিশালী করা হয়েছে। আগে এটিভি নিয়ে কথা থাকলেও সেটা এখন সংশোধন করে এটি করা হয়েছে। এই এটি এখন সবাইকে দিতে হবে। এছাড়া ভ্যাট ফাঁকি রোধে অনেকগুলো সফটওয়্যার করা হচ্ছে। আশা করছি, এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে ভ্যাটি ফাঁকি রোধ সম্ভব হবে এবং রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।