রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ চায় গাম্বিয়া
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৪৮
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে শুনানি শুরু হয়েছে হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে)। শুনানির প্রথম দিনে নিজেদের তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করা গাম্বিয়া। আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি।
গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে আদালতে প্রফেসর স্যান্ডিস জানিয়েছেন, গণহত্যার বিচারের সর্বশেষ আশ্রয় এই আদালত। রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৬টি অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ চায়।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) এই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানির দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল বুধবার মিয়ানমার অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারক আব্দুলকায়ি আহমেদ ইউসুফ অভিযোগ পড়ে শোনান। গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রফেসর স্যান্ডিস বলেন, গণহত্যার বিচারের জন্য এই আদালত সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সবাই মামলাটির দিকে তাকিয়ে আছে। মিয়ানমার গণহত্যা বিষয়ে কখনোই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি জানান, গাম্বিয়া আদালতের কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৬টি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চায়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আর যেন গণহত্যার মতো ঘটনা মিয়ানমারে না ঘটে তা নিশ্চিত করা, আগের গণহত্যার আলামত নষ্ট না করা, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার সরকার উভয় পক্ষকে শান্ত থাকা এবং উত্তেজনে প্রশমনে সাহায্য করা। এছাড়া, মিয়ানমার জাতিসংঘকে তদন্তের ব্যাপারে সাহায্য করবে এই নিশ্চয়তাও চায় গাম্বিয়া।
এছাড়া অধ্যাপক পায়াম আখাভান তার বক্তব্যে গণহত্যা নিয়ে তদন্তে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, কীভাবে মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের পুরো দেশ থেকে যেভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় ও নিপীড়নের চালানো হয়, জাতিসংঘের অনুসন্ধানের বরাতে তাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রোপাগান্ডার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ৫৭ সদস্যের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক করপোরেশন (ওআইসি) মিয়ানমারে বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সমর্থন করছে।
শুনানিতে বিচারক প্যানেল সু চিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। রোহিঙ্গাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা মিয়ানমার সরকারকে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ উঠে। অভিযানের মুখে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। সে সময় মিয়ানমারের সেনাসদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী রোহিঙ্গাদের নিধনে সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।