Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটে রবীন্দ্রনাথ ও মণিপুরি নৃত্য প্রবর্তনের শতবর্ষ পূর্তি


১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৩০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৫৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সময়কাল নভেম্বর ১৯১৯, শতবর্ষ আগে– বাংলা ১৩২৬ সালের কার্তিক মাসের মাঝামাঝি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেড়াতে এসেছিলেন সিলেটে। ৫ নভেম্বর সকালে ট্রেন সিলেট স্টেশনে পৌঁছালে কবিগুরুকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়।

সুরমা নদীর ওপর ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ তখনো হয়নি। কবিগুরু ও তার সঙ্গীরা বজরায় সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে মূল সিলেট শহরে প্রবেশ করেন। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চাঁদনীঘাটকে পত্র-পুষ্প পতাকা, মঙ্গল ঘট আর লাল শালু দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। শহরের উত্তর-পূর্বাংশে ছোট টিলার ওপর পাদ্রি টমাস সাহেবের বাংলোর পাশে একটি বাড়িতে কবির থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে পৌঁছালে কবিকে সংগীত ও চন্দন তিলকের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ব্রাহ্মসমাজের আমন্ত্রণে কবি উপাসনায় যোগ দেন। সেই দিন কবি গুরু তার নিজের রচিত ব্রাহ্ম সংগীত গেয়ে শোনান ‘বীণা বাজাও যে অন্তরে’।

বিজ্ঞাপন

কবিগুরুর এই সফরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মণিপুরি নৃত্য। সিলেটের মণিপুরি পল্লী-মাছিমপুরে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবারের মতো মণিপুরি নৃত্য- রাসনৃত্য দেখতে গিয়েছিলেন। এই নৃত্যের অন্তর্নিহিত ভাবসম্পদ, শান্ত সমাহিত ভঙ্গি এবং সাবলীল ছন্দ দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের কোর্স প্রবর্তন করেন। তার কালজয়ী রচনা চিত্রাঙ্গদা, চন্ডালিকা, মায়ার খেলা, নটীর পূজা, শাপমোচন নৃত্যনাট্যে মণিপুরি নৃত্যের স্থান দেন। বলা হয়ে থাকে মণিপুরি নৃত্যকে মণ্ডপ প্রাঙ্গন থেকে বের করে বিশ্বমণ্ডলে স্থান করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। মুলত শান্তিনিকেতনে প্রবর্তনের মাধ্যমে এই নৃত্যের বিশ্বময় প্রচার ও সৌকর্য সাধিত হয়।

মণিপুরি নৃত্যের প্রসার ও বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অনবদ্য অবদানকে স্মরণ করতে কমলগঞ্জ মৌলভীবাজারের ‘বাংলাদেশ মণিপুরি আদিবাসী ফোরাম’ ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর ‘শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্য প্রবর্তনের শতবর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। পুরো আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে কমলগঞ্জের তিলকপুর দয়াময় সিংহ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।

মণিপুরি নৃত্যগুরু কলাবতী দেবী, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃত্যসংগঠক গবেষক লুবনা মারিয়াম ও নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এরপর আলোচনা সভা। এতে মণিপুরি আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সমরজিত সিংহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. গোলাম শফিউদ্দিন এনডিসি, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত, মণিপুরি নৃত্য ও নাটক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওয়াই হেমন্তকুমার, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মণিপুরি নৃত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রাক্তন অধ্যাপক মণিপুরি নৃত্যগুরু কলাবতী দেবী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, নৃত্যসংগঠক ও নৃত্যগবেষক লুবনা মারিয়াম, চিত্রশিল্পী নারগিস পারভিন সোমা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা।

সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক পর্বে থাকবে শান্তিনিকেতনের হেমন্তকুমার, শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়, কলাবতী দেবী, কলকাতার কঙ্কনা সিংহ, আসামের আশুকান্তি সিংহ, ধর্মনগর ত্রিপুরার দেবাশিষ চৌধুরী, ঢাকার সামিনা হোসেন প্রেমা, মৌমিতা সিনহা, মহামায়া শর্মা, নীলমণি সিংহ ও ধীরেন্দ্রকুমার সিংহের দলসহ আরো অনেকের পরিবেশনা।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও এরপর পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দু’দিনের এই আয়োজন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ টপ নিউজ বাংলাদেশ মণিপুরি আদিবাসী ফোরাম মণিপুরি নৃত্য শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্য প্রবর্তনের শতবর্ষপূর্তি