পিপলসের চেয়ারম্যান, এমডিসহ ৩০ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৪১
ঢাকা: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৩০ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এর মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান, দুইজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ১৮ জন পরিচালক এবং ৯ জন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ ২১ পরিচালক ২০১৫ সাল থেকে পিপলসের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। অন্যদিকে, ৯ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে উর্ধ্বতন পদে পিপলস লিজিংয়ে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) পিপলস লিজিংয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবি ব্যারিষ্টার মেজবাহুর রহমান সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পিপলসের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক ও কর্মকর্তাসহ ৩০ জনের দেশ ত্যাগের বিষয়ে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একইসঙ্গে আদালত তাদের পাসপোর্ট জব্দ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিচারপতি খুরশিদ আলমের একক বেঞ্চ গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শেষে ৫ ডিসেম্বর আদেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ৩০ জনের মধ্যে ১১ জনের আগে থেকেই ব্যাংক হিসাব জব্দ ছিল। এখন ওই ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দের পাশাপাশি তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং পাসপোর্ট জব্দ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৯ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ ৩০ জনের প্রত্যেকেরই বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে ৩০ জনের দেশত্যাগ ও পাসপোর্ট জব্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিচারপতি খুরশিদ আলমের একক বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে আদেশের কপি এখনো হাতে আসেনি। দুয়েকদিনের মধ্যে আশা করছি আদেশের কপি পাবো। আদেশের কপি পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিপলসের যে ৩০ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা: বিদেশ ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞায় জারি করা ৩০ জনের মধ্যে ২১ জনই পরিচালক, বাকি ৯ জন কর্মকর্তা। পরিচালক ২১ জনের মধ্যে রয়েছেন, চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিউল হুদা ও এমএ ইউসুফ খান। এছাড়াও পরিচালক সায়মা ইসলাম, অমিতাভ অধিকারী, নার্গিস আলামিন, হুমায়িরা আলামিন, আরেফিন শামসুল আলামিন, এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিৎ কুমার রায়, খবিরউদ্দিন মিয়া ও এম শহিদুল হক।অন্যদিকে ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক হলেন, নিজামুল আহসান, আবদুল কাদের সিদ্দিকী, শিখর কুমার হালদার, এমডি ইকবাল সাঈদ, সুকুমার মৃধা। বাকি দুইজন নমিনেটেড পরিচালক, এরা হলেন নোয়াং চুং মং ও নাইং আইং টিং।
এছাড়াও, পিপলস লিজিংয়ের ৯ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন, এক্সিকিউটিভ পরিচালক হেলাল উদ্দিন, হেড অব লাইবেরিটি হারুন আর রশিদ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদিক আহমেদ জামাল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহেল শামস, সিনিয়র সেলস ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন পলাশ, সেলস এক্সিকিউটিভ ফিরোজ মাহমুদ ও তরিকুল ইসলাম, উপমহাব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোস্তাক আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক নৃপেন্দ্র চন্দ্র পন্ডিত।
পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেনীর আমানতকারীর।
এছাড়াও পিপলস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ বাবদ পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। তবে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিতে আমানতকারী পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা।
পিপলসের বর্তমান সম্পদ: পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে যাত্রা শুরু করে। পরে ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে রয়েছে। ২০১৯ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের জন্য আবেদন করলে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানির দায় দেনা নিরীক্ষা করতে একনাবিন অর্ডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।