Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাখাইন গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে আনার সমালোচনা সু চির


১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৬

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে আনার সমালোচনা করেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। তিনি বলেন, জাতিগত সংঘাত নয়, সশস্ত্র গোষ্ঠির আধিপত্যের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন তিনি।

সু চি বলেন আমি আগেও বলেছি  মিয়ানমারের রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যদি গণহত্যা চালিয়ে থাকে তাহলে মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী  সামরিক বিচার ব্যবস্থায় তাদের তার বিচার করা হবে। মিয়ানমারের সামরিক আইন অত্যন্ত কঠোর এবং আন্তর্জাতিক মানের। আমরা মনে করি এই ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা উচিত। রাখাইনে অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন এই অভিযোগ প্রমাণ হলে তা কোনোভাবেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় পড়ে না।

আমরা আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে জানি এবং তা মেনে চলি। মিয়ানমারের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। রাখাইনে ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহল একচোখা অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থানের কারণে রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা শুধুমাত্র নেতিবাচক বক্তব্যই দিচ্ছে না, তাদের ভাষাগত সমস্যায় চূড়ান্ত রকমের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন এখানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। ১৯৮০ সাল থেকেই মিয়ানমার তার অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সু চি আরও বলেন, আশির দশকের আগে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী চক্রের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার। আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতির মানসিকতা লালন করতে হবে। এটা একজন নেতার বড় দায়িত্ব। মিয়ানমার সরকার দেশের ভেতরে সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা অংশীদারদের সহযোগিতায় চেষ্টা করে যাচ্ছি সব ধর্মের মানুষ যেনো মৌলিক অধিকার উপভোগ করতে পারে। নাগরিকত্ব যাচাই ও নিবন্ধনে একটি ভ্রাম্যমাণ দল কাজ শুরু করেছে। রাখাইনে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুকেই জন্ম সনদ দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই তারা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের সু্যোগ পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। রাখাইন রাজ্যের সকল সম্প্রদায়ের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের সামাজিক মানোন্নয়নে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই রাখাইন রাজ্য থেকে তিনটি সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। মিয়ানমারও চায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদা সম্পন্নভাবে প্রত্যাবাসিত হোক। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিও আমরা সম্পাদন করেছি। গণহত্যার মানসিকতা থাকলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কিভাবে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হলো, প্রশ্ন রাখেন সু চি।

সবশেষে তিনি  বলেন রাখাইনে যা হয়েছে তা আরাকান বুদ্ধিস্ট আর্মি ও রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ। সেইখানে মুসলিমদের কোনো দায় ছিল না। সংঘর্ষের মাঝে পড়ে তাদেরকে বাস্তুচ্যুত  হতে হয়েছে। এখনও সেইখানে সংঘর্ষ চলমান আছে। আমরা চাচ্ছি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ফেডেরাল মিয়ানমারের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে।

এরপর, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রফেসর উইলিয়াম সিবার্স।

গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ৫৭ সদস্যের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক করপোরেশন (ওআইসি) মিয়ানমারে বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সমর্থন করছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ উঠে। অভিযানের মুখে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। সে সময় মিয়ানমারের সেনাসদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী রোহিঙ্গাদের নিধনে সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।

অং সান সু চি আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর