যুদ্ধে হার মানিনি, এখন যুদ্ধ মাদকের বিরুদ্ধে: আইজিপি
১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অগ্নিসন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক সদস্য মৃত্যুবরণ করলেও পুলিশ হার মানেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ মন্তব্য করেন। নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে এ সমাবেশে শিক্ষাবিদ, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ছিলেন।
আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের পূর্বসূরীরা রাজারবাগে নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ গড়ে তুলেছিলেন। আমাদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী অগ্নিসন্ত্রাস রুখে দিয়েছিল। আমরা আমাদের ১৭ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি। এক হাজারেরও বেশি সদস্য পঙ্গুত্ববরণ করেছিলেন। ২০১৬ সালে জঙ্গি দমন করতে গিয়ে আমাদের অনেক সাহসী পুলিশ অফিসার মৃতুব্যরণ করেন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কিন্তু অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা হার মানিনি।’
আইজিপি আরও বলেন, ‘এখন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আমরা আশাবাদী, আমাদের পাশে জনগণ যেভাবে দাঁড়াচ্ছে, আমরা সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের মতো মাদককেও দেশছাড়া করতে পারব। এদেশে থাকবে না কোনো মাদক, কোনো দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থাকবে না।’
জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে মাত্র একজন পুলিশ। আমরা মনে করি, এ সংখ্যা যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের মান অনুযায়ী প্রতি ৪০০ জনের জন্য একজন পুলিশ প্রয়োজন। সেই মাইলফলক ছুঁতে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।’
‘চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে পুলিশ আছে মাত্র ৭ হাজার। অর্থাৎ প্রতি এক হাজার জনের বিপরীতে একজন পুলিশ। একজন পুলিশ দিয়ে কীভাবে এক হাজার নাগরিকের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব?’ বলেন আইজিপি।
সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, সিএমপির সাবেক কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ও সিএমপির বর্তমান কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
সমাবেশে সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে এ মুহূর্তে যে কোনো বিচারে, যে কোনো পরিসংখ্যানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এ জন্য আমরা চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা, চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের বিশেষ করে শাসক দলের রাজনীতিকদের কৃতিত্বটা দিতে চাই। রাজনীতিকদের কেউ অযাচিত, অনভিপ্রেত কোনো আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ করেননি যাতে আমাদের বিব্রত হতে হয়। সে জন্য এ শহরকে আমরা নিরাপদ রাখতে পেরেছি।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, সিএমপির সাবেক কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।
সমাবেশের আগে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর ছিল নৃত্যশিল্পী অনন্য বড়ুয়ার দলের পরিবেশনা। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে, বুধবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদে পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংকের উদ্বোধন করেন আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি।