আজ যুক্তরাজ্যে নির্বাচন, কিছুটা ‘এগিয়ে’ কনজারভেটিভরা
১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:৪৯
আরও একটি জাতীয় নির্বাচনের সামনে যুক্তরাজ্য। চার বা পাঁচ বছর পর পর দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ব্রেক্সিট ধাক্কায় পাঁচ বছরের মধ্যে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের যজ্ঞে নামতে হচ্ছে যুক্তরাজ্যবাসীকে। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। ব্রেক্সিট গণভোটে হেরে সরে দাঁড়ান তিনি। তার জায়গায় টেরিজা মে দায়িত্ব নিয়েও টিকতে পারেননি। সর্বশেষ বরিস জনসনকেও একই পথ বেছে নিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম শীতকালে এবং গত একশ বছরের মধ্যে এই প্রথম ডিসেম্বর মাসে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন ও বিরোধী লেবার পার্টির জেরেমি করবিন নিজেদের সংক্ষিপ্ত প্রচার পর্ব শেষ করেছেন। নির্বাচনে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। যদিও ইউগভ’স-এর জরিপ বলছে নির্বাচনে কিছুটা এগিয়ে কনজারভেটিভরা।
নির্বাচনের খুঁটিনাটি
পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের বিপরীতে নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা ৩ হাজার ২২২ জন, ভোটার রয়েছেন ৪ কোটি ৬০ লাখ। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, বিরোধী লেবার পার্টি, দ্য স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি), লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)। এদের মধ্যে যেকোনো দল ৩২৬ আসন পেলে একাই সরকার গঠন করতে পারবে। নতুবা আবারও কোয়ালিশন বা ঝুলন্ত পার্লামেন্টের মুখ দেখবে ব্রিটেনবাসী। কনজারভেটিভদের হটাতে লেবার ও তৃতীয় বৃহৎ দল এসএনপি জোট গড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যজুড়ে ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। নির্বাচনের দিন রাতে ও পরবর্তী দিনে ঘোষণা হতে থাকবে ফলাফল। বিজয়ী দলের প্রতিনিধিরা বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রানির কাছে নতুন সরকার গঠনে অনুমতি চাইবেন। দলের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে প্রবেশের আগেই নতুন সরকারের পরিকল্পনা জানাবেন।
বিগত নির্বাচন ও বর্তমান অবস্থা
গতবার ২০১৭ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ বা লেবার কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কনজারভেটিভরা জিতেছিল ৩১৮ আসন। বিপরীতে লেবাররা পায় ২৬২টি। সেবার ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে হয় কনজরাভেটিভদের।
এখন ২০১৯-এ এসে কনজারভেটিভ ও লেবার উভয় দলের সমর্থক এমপির সংখ্যা কমেছে। পার্লামেন্টে এখন ২৯৮ জন কনজারভেটিভ সমর্থিত এমপি রয়েছেন, লেবার ২৪৩ জন। অপরদিকে এসএনপি ৩৫, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ২০ ও ডিইউপি পার্টিকে ১০ এমপি সমর্থন দিচ্ছেন।
এবারের নির্বাচন নিয়ে জরিপ কী বলছে
শেষ মুহূর্তে ইউগভ জরিপ বলছে নির্বাচনে কনজারভেটিভরা ৩৩৯ সিট পেতে পারে, লেবাররা হয়তো পাবে ২৩১টি। এছাড়া এসএনপি ৪১ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটসদের ১৫টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সবমিলিয়ে কনজারভেটিভরা ২৮ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে নির্বাচনে। যদিও নভেম্বরের শেষদিকে ধারণা করা হচ্ছিল ৬৮ সিট বেশি পেতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
ইউগভের জরিপে এও সতর্ক করা হয়েছে, কনজারভেটিভদের আসন সংখ্যা হতে পারে ৩১১ থেকে ৩৬৭ পর্যন্ত যেকোনো কিছু। তাই আবারও ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কা থাকছেই। শেষ মুহূর্তে বিরোধী লেবারদের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলায় এই নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে।
কেন অকস্মাৎ এই নির্বাচন?
কনজরাভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ব্রেক্সিট ইস্যুতে নিজ দলের এমপিদের বিরোধিতার মুখে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগাম নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের শঙ্কা কেটে গেলে বিরোধী লেবার পার্টি জনসনকে নির্বাচনের ব্যাপারে সমর্থন দেয়।
ভোটাধিকার রয়েছে যাদের
যাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে, বয়স ১৮ পূর্ণ হবে, তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আইরিশ ও কমনওয়েলথ নাগরিক যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তারাও জড়ো হতে পারবেন ভোটকেন্দ্রের অভিমুখে।
নির্বাচনে যেসব বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে
ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে দলগুলোর মূল লড়াই। নির্বাচনের ক্যাম্পেইনজুড়ে ছিল ব্রেক্সিট ইস্যুর প্রাধান্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অচলাবস্থা কাটাতে দলগুলো তাদের ধ্যান-ধারণা পেশ করেছে। বরিস জানিয়েছেন, নির্বাচনে জিতলে পরবর্তী সময়সীমার মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যকে ইইউ থেকে মুক্ত করতে প্রস্তুত রয়েছেন। লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে যদি আবারও ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোট হয়, তবে তিনি সে ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবেন। তবে ব্রেক্সিটের বাইরেও ব্রিটিশদের মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে আছে, স্বাস্থ্যসেবা, বিনিয়োগ সুবিধা, শিক্ষা ব্যয়, রেল পরিবহন, জ্বালানি অভিবাসনের মতো বিষয়।