ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছে, তা অভূতপূর্ব ও গোটা জাতির জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের হাতে এমন রাষ্ট্রীয় অমর্যাদা বন্ধ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনারকে আশু অপসারণ ও নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ দাবি জানান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশন সচিবালয় এবং অন্যান্য কমিশনারদের ন্যাক্কারজনক কাদা ছোড়াছুড়ির যে খবর দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা অভূতপূর্ব ও গোটা জাতির জন্য বিব্রতকর। অন্তত একজন কমিশনার একজন নিরাপত্তারক্ষীর নিয়োগের জন্য কমিশন সচিবালয়কে সুপারিশ করেছিলেন বলে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়। সেই সুপারিশ রক্ষা করা হয়নি বলে কমিশনাররা তোলপাড় করেছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ যে সরাসরি নৈতিক স্খলন সেটা অনুধাবন করার মতো অবস্থাতেও নির্বাচন কমিশনাররা নেই।’
‘অন্যদিকে কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে কমিশনারদের অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্বের সংবাদ এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে পদদলিত করেছে। সাংবিধানিক পদাধিকারীরা যখন নিজেদের সচিবালয়ের বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ করেন তখন সেটির গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। দেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছি।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ও এর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় পচন ধরেছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মতো সুবিবেচনা ও সক্ষমতা আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার বা কমিশন সচিবালয়ের কাছে আশা করার মতো সাহস পাচ্ছি না। কারণ একের পর এক কেলেঙ্কারির পর তারা যেভাবে স্বপদ আঁকড়ে ধরে আছেন, তাতে এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সংশ্লিষ্ট সবাই নিজেদের জবাবদিহিতা ও ন্যূনতম আত্মসমালোচনার ঊর্ধ্বে বলে ধরে নিয়েছেন।’
এই নির্বাচন কমিশন গোটা জাতির মাথা হেঁট করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এ সত্যটিও কমিশন সংশ্লিষ্টরা সম্ভবত ভুলে গেছেন। তাদের অধীনে ভবিষ্যৎ যে কোনো কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এরকম অবমাননাকর অধ্যায়ের শেষ হওয়া দরকার। ব্যর্থতা এবং নৈতিক স্খলনের দায় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্যান্য কমিশনাররা যে সরে যাবেন না তা এতদিনে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারা তাদের শপথের অবমাননা করছেন, সংবিধান অবমাননা করছেন এবং তারা নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতির অসম্মানের ঝুঁকি সৃষ্টি করছেন।’
রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, এই ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণ করতে রাষ্ট্রপতির কাছে সশ্রস্ত আবেদন করছিন। বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণ করে নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। পাশাপাশি এ পর্যন্ত যত অনিয়ম হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তার তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।