বুদ্ধিজীবীদের পলাতক ঘাতকদের ফেরানোর দাবি মেয়র নাছিরের
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত বিদেশে পলাতক ঘাতকদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এসব কথা বলেন মেয়র।
মেয়র নাছির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসররা কতজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো তৈরি হয়নি। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রাথমিকভাবে এক হাজারেও বেশি। এরমধ্যে আছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ডাক্তার, চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীরা। এরা আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমি সরকারের কাছে আহবান জানাই বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত এখনো অনেকে বিদেশে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায়ে প্রদত্ত সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হোক।’
একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের উষালগ্নে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালিকে মেধা শূন্য করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নীল নকশায় রাজাকার-আলবদর-আলশামস বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এই নীল নকশার প্রধান পরিকল্পনাকারীদের বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আদালতের রায়ে ফাঁসির দড়িয়ে ঝুলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে দায়মুক্ত করেন।’
বাঙালিকে মেধাশূন্য করার চক্রান্ত এখনও অব্যাহত আছে বলে মন্তব্য করেন মেয়র।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে- কোন উদ্দেশ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ নতুন প্রজন্মকে পরিকল্পিতভাবে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বিপথগামী করতে চেয়েছিল।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আরও ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইসহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের নিয়ে নগরীর পাহাড়তলীতে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রথম প্রহরে শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। চট্টগ্রাম জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা রাতে শহীদ মিনারে ফুল দেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিও রাতে ফুল দিয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের চট্টগ্রামের নেতারা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এসময় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সদস্য রুবেল খান ও আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, গ্রন্থাগার সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য ম শামসুল ইসলাম ও স ম ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক স্বপন কুমার মল্লিক ছিলেন।
শনিবার সকালে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এসময় উদীচী সংগঠকদের মধ্যে চন্দন দাশ, বিধান বিশ্বাস ও জয় সেন ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ-ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
এদিকে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে নগরীর চশমা হিলে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে অলোচনা সভা এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে নগর মহিলা আওয়ামী লীগ। আলোচনা সভায় নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো জাতির ইতিহাসে নেই। যারা এই অপকর্ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা কখনো শেষ হবে না। আমাদের সন্তানদের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানিয়ে তাদের মধ্যেও ঘাতকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। এই ঘৃণার মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্ম পরিশুদ্ধ হবে।’
নগর মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক নীলু নাগের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মমতাজ খান, যুগ্ম সম্পাদক মালেকা চৌধুরী, হাসিনা আকতার টুনু, হুরে আরা বিউটি, লায়লা আক্তার এটলী, শারমিন ফারুক, আয়েশা আলম, ফাতেমা আকতার, ঝর্ণা বড়ুয়া, আয়েশা আক্তার পান্না, ইশরাত জাহান, মনোয়ারা বাহাদুর।