‘আসল রহস্য ফাঁসের ভয়ে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি’
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০২
ঢাকা: আসল রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার ((১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। সেই কারণে আসল রহস্য ফাঁস হওয়ার ভয়ে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বেগম জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার আচরণ দেশ-কাল-সভ্যতার পক্ষে কলঙ্কের।’
তিনি বলেন, ‘৩১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বজনদের তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই সাক্ষাত করতে দেওয়া হয়নি। অথচ আজ বেগম জিয়ার সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের অনুমতি ছিল।’
আরও পড়ুন: ১৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন স্বজনরা
আকস্মিকভাবে বেলা ২টার সময় অনুমতি বাতিলের কথা জানানো হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আমরা বলতে চাই-উচ্চতর কর্তৃপক্ষ কে? কত উচ্চতায় তিনি অবস্থান করেন? এটি জেল কর্তৃপক্ষ না জানলেও জনগণ তা ভালোভাবেই জানে। জেল কর্তৃপক্ষের প্রভূরাই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আদালতকে দিয়ে যার নির্দেশে দেশনেত্রীর জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে, সেই উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আজ বেগম জিয়ার স্বজনরা অনুমতি থাকার পরেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না। এই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর ভয়েই দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অস্ত্রই প্রয়োগ করছেন শেখ হাসিনা। তার কারিগরিতেই গত বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাননি। শোকে-দুঃখে, রোগে তাকে কারাবন্দি রেখে জীবন বিপন্ন না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনা অবৈধ ক্ষমতা-যন্ত্রের দ্বারা নিপীড়ন চালিয়েই যাবেন। আলো-বাতাসহীন বন্দিশালার বদ্ধ কক্ষে মৃত্যুকে বেগম জিয়ার ছায়াসঙ্গী করে রেখেছেন শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘এই বন্দিত্বের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের সকলে সোচ্চার হওয়ার পরও শেখ হাসিনা সেগুলোকে তোয়াক্কা না করে বেগম জিয়ার জামিন আটকে দিয়েছেন। আর আজ বেগম জিয়ার স্বজনদেরকে সাক্ষাৎ করতে না দিয়ে বন্দির অধিকারটুকুও ক্ষুন্ন করেছেন। একজন সাধারণ বন্দির সঙ্গে সাত দিন পরপর দেখা করার সুযোগ থাকে। সেখানে মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার স্বজনদের দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘যে সরকারপ্রধানের রাজমুকুটে বিরোধীদল ও মতের রহস্যময় অন্তর্ধান, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা শোভা পায়, সেই প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে ধ্বংস করার জন্য মহাসমারোহে কাজ করবে—এটাই স্বাভাবিক। যিনি সারাদেশকে দুঃশাসনের দোজখের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন, তার কাছ থেকে কোনো ন্যায়সঙ্গত কাজ আশা করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘তার রাজ্যশাসনের জয়োল্লাসের মধ্যে শুধুই হিংসা ও রক্তপাতের ছবি। যিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন, যিনি জনগণকে নির্বাক জনগোষ্ঠী তৈরি করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন, তার কাছ থেকে ন্যায় ও সুবিচার আশা করা মুর্খের স্বর্গে বাস করার সামিল। তবে এই দুর্বিষহ দুঃশাসন যে বেশি দিন টেকে না, এটা কখনও কোনো নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক বুঝতে পারে না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার জামিন পেতে বাধা দিয়ে আদালতকে সম্পূর্ণ কব্জায় নিতে পেরে শেখ হাসিনা এটিকে নিজের সাফল্য হিসেবে দেখছেন এবং সেই কারণেই তিনি আরও বেশি উদ্ধত ও অহংকারী হয়ে উঠে আজকে বেগম জিয়ার সাথে তার স্বজনদের সাক্ষাত করতে দেননি। কিন্তু যখনই কোনো অবৈধ শাসক নিরঙ্কুশ ক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠে, তখন তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না এবং তারা বোঝে না যে, গণেশ যেকোনো মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে। বর্তমান সরকারেরও কোনো বৈধতা নেই এবং তাদের বদ্ধ দরজায় পতনের কড়া নড়ছে।’
এরই মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরে গোটা নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে। এ বিয়য়ে রাষ্ট্রপতিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সুতরাং এই সরকারের পতন অনিবার্য। ক্ষুদ্ধ জনগণের বিসুভিয়াসের মতো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির যেকোনো মুহূর্তেই উদগীরণ ঘটবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।