Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলায় ছাত্রত্ব বাতিল-রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত


১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:৪২

রাজশাহী: রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীকে বহিস্কারসহ ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গত সোমবারের (৯ ডিসেম্বর) একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর মধ্যে ৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিস্কার, ৫ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা এবং ৭ শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সাট্রিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরাধী চিহ্নিত হওয়া এসব ছাত্ররা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

এছাড়াও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

অধ্যক্ষ জানান, প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই সভায় দোষী প্রমাণিত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সূত্র জানায়, সভায় যাদের ছাত্রত্ব বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলো- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার মূল হোতা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।

আর সরাসরি ঘটানার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ৫ শিক্ষার্থীর মূল সনদপ্রত্রসহ অন্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলো- ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।

অধ্যক্ষকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে নিক্ষেপ, ৫০ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা

এছাড়াও পরোক্ষ ভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৭ শিক্ষার্থীকে অন্যত্র বদলি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলো- ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুণ্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মেহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চলমান রেখে সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। একারণে আগামী ৫ বছর এখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চারশেল হিসেবে পরিচিত ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙে ছাত্র কমন রুম বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা ২ শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষকে চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করছিলো। পরে সেটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ পুকুরে ছাত্রলীগ টপ নিউজ রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর