‘খুনি মোশতাক-জিয়ার মতো বেঈমানের জন্ম বাংলার মাটিতে বারবার হয়েছে’
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:১১
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বাংলাদেশের মাটিতে সেই মীরজাফর, মোশতাক থেকে শুরু করে খুনি জিয়াউর রহমানের মতো বেঈমানের জন্ম বারবার হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেই দায়িত্বটা দেশের জনগণ ও তরুণ সমাজকে নিতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে তা আজ বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা করে আওয়ামী লীগ। সভার শুরুতে শোকাবহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে নিহত সব শহীদদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে এক মিনিট শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৫ আগস্টের পর ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। এসময় মোশতাক, জিয়া থেকে এরশাদ-খালেদা জিয়া সরকারের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু সত্যকে কখনো কেউ একেবারে মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে সারা বিশ্বের কাছে। আজ তা প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ পারবে না এটা মুছে ফেলতে।’
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়ে গেছেন এদেশের জন্য, যাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে- তাদের নামটাও তো মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুছে ফেলতে পারেনি। কারণ আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, কখনোই বৃথা যায় নাই। সেটাই প্রমাণ হয়েছে এখন বাংলাদেশে।’
‘কিন্তু আমাদের এটাও চিন্তা করতে হবে যে, এই বাংলাদেশের মাটিতে এখানে সেই মীরজাফর, মোশতাক থেকে শুরু করে এরকম বেঈমানের জন্ম বারবার হয়েছে বা ওই খুনি জিয়ার মতো খুনিরা বারবার এসেছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আর এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেই দায়িত্বটা বাংলাদেশের জনগণকেই নিতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজকে নিতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই স্বাধীন বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে, সেভাবে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বসভায় যেন বাংলাদেশ তার মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, তাহলেই শহীদের আত্মত্যাগ এবং তাদের যে মহান অবদান, সেটা চিরভাস্কর হয়ে থাকবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে ফোটানো, বাংলাদেশকে সেভাবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রত্যেকটা লক্ষ্যই হচ্ছে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো।’
‘ফ্রিডম পার্টি বানিয়ে খুনের স্বাধীনতা দিয়েছিল এরশাদ’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশকে আর কোনদিন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। এদেশের মানুষ যেন খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায়। জাতির পিতা আমাদের সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেই সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেই অধিকারগুলি সুরক্ষিত করা এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হচ্ছে একটা জাতিরাষ্ট্র। একটা ভাষার দেশ আমাদের এবং সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনেছি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। এ কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান হিসাবে অনুভূতি ব্যক্ত করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। এছাড়াও দলের নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, আবু আহম্মেদ মান্নাফী বক্তব্য রাখেন।
যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।