Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিডিয়া লিটারেসি’তে যেভাবে অনুসরণীয় ফিনল্যান্ড


১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:০০

ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই সময়ে ‘ভুল তথ্য’ মোকাবিলা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব রাখার অভিযোগ যেমন রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তেমনি, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অনলাইনকে। এছাড়া, ফটোশপে বিকৃত ছবি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উদাহরণ উপমহাদেশে রয়েছে ভুরি ভুরি।

বিজ্ঞাপন

এসব বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে নর্ডিক রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড আরও আগ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। যা অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। ফিনল্যান্ডের শিশু-কিশোরদের এখনই শেখানো হচ্ছে মিডিয়া লিটারেসি। সহজভাবে বললে, ওয়েব বা ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যটি সঠিকভাবে খুঁজে পাওয়ার যোগ্যতাকে মিডিয়া লিটারেসি বা গণমাধ্যম–সংক্রান্ত দক্ষতা হিসেবে দেখা হয়।

যেভাবে শুরু

প্রায় একশ বছর আগে রাশিয়া থেকে স্বাধীন হয় ফিনল্যান্ড। সেই থেকে ক্ষমতাধর এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা মোকাবিলা করে আসছে ফিনিশরা। রাশিয়ার সঙ্গে ৮৩২ মাইল সীমান্ত সামলানোর পাশাপাশি নিজেদের ডিজিটাল স্পেস বা ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়েও ভেবেছে দেশটি।

অনলাইন জগতে রাশিয়া ফিনিশদের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে ২০১৪ সালে ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অসত্য খবর’ বিরোধী প্রজেক্ট নেয় ফিনল্যান্ডের সরকার। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের। এর দুবছর পরই মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়িয়ে প্রভাব রাখে বলে অভিযোগ উঠে। ফিনল্যান্ড ন্যাটোভুক্ত হওয়ায় রাশিয়া যে ফিনিশদের লক্ষ্যবস্তু করবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রধান কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট তোইভানইন জানান, কতবার ভুল তথ্য ছাড়ানোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে অভিবাসন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির বিষয় লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

২০১৫ সালে অনলাইনে ভুল তথ্য ছাড়ানোর প্রকোপ দেখা দিলে তৎকালীন ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্টো আহ্বান জানান, প্রত্যেক ফিনিশদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে। এক বছর পর ফিনল্যান্ড আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসে যাতে ‘অসত্য খবর শনাক্ত করা’ ও ‘ছড়িয়ে পড়া রোধ করা’র বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

ফিনল্যান্ডের মিডিয়া লিটারেসি প্রক্রিয়া

গণমাধ্যমে ভুল বা মিথ্যা তথ্য বিষয়ে সচেতন করে তোলা দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিশুদের এসব বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের জানানো হয়, ছবি ও ভিডিও বিকৃত করা, অর্ধসত্য, ফেক প্রোফাইল, ভুল অনুবাদ, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও ভয়ভীতি দেখানো হলে এসব বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে। এছাড়া, কখনো কখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন, ব্রেক্সিট, অভিবাসন, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। যাতে তাদের বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা যাচাই করা যায়। শিক্ষার্থীরা দলে দলে ভাগ হয়েও এ কাজগুলো করে। এছাড়া ফিনল্যান্ডে ফ্যাক্টাবারি’র মতো ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি রয়েছে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সহায়তা দেয়।

হেলসিংকি ফ্রেঞ্চ-ফিনিশ স্কুলের ডিরেক্টর কারি কাভিনিয়েন বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কিছু শেয়ার করার আগে তা নিয়ে দুবার ভাবুক। কে এটা লিখেছে? কোথা থেকে প্রকাশিত হয়েছে? একই তথ্য অন্যকোনো সূত্র থেকে পাওয়া সম্ভব কিনা? এসব নিয়ে চিন্তা করুক।

তাতু তুকিনিয়ান (১৫) নামের এক শিক্ষার্থী অনলাইন সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ইন্টারনেটে কোনোকিছু বা কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। সবকিছুর জন্য ফ্যাক্ট-চেক করে নিতে হয়, এটা বিরক্তিকর।

অ্যালেক্সান্ডার সেমিকা (১৭) নামের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, সংবাদের জন্য সে ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, রেড্ডিট ও টুইটার ব্যবহার করে। তবে ফেসবুক নয়। এটা ‘বুড়োদের’ মাধ্যম।

কিভিনান নামের অপর শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ফ্যাক্ট-চেকিং ও জটিল চিন্তাভাবনার সমন্বয় করছি।

যেভাবে এগিয়ে চলেছে ফিনিশরা

সম্প্রতি ইউরোপের এক জরিপে দেখা যায় মিডিয়া লিটারেসিতে ফিনিশরা শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া প্রেস ফ্রিডম, লৈঙ্গিক সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও শিক্ষা কিংবা সুখী দেশের তালিকা সবকিছুতেই শীর্ষ দেশগুলোর একটি ফিনল্যান্ড। জাতিগতভাবে ফিনিশরা পড়ুয়া। লাইব্রেরিতে তারা প্রচুর সময় কাটায়। যা সামাজিক সূচকে অগ্রগতির অন্যতম কারণ।

এ যুদ্ধের শেষ নেই

ফিনল্যান্ড ফেক বা অসত্য নিউজের বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধে সফলতা পেয়েছে। অন্যান্য দেশগুলো ফিনল্যান্ডকে এ ব্যাপারে অনুরসরণ করছে। সিঙ্গাপুরসহ ইইউ দেশগুলো অনলাইন মাধ্যম নিরাপদ করতে দেশটির সাহায্য চাইছে। ফিনল্যান্ডে কিছুদিন আগের নির্বাচনে স্লোগান হিসেবে বলা হয়, ফিনল্যান্ড সবচেয়ে সেরা নির্বাচনের আয়োজন করছে। কারণ ইন্টারনেটে অসত্য সংবাদের কোনো স্থান নেই সেখানে।

নিজেদের সচেতন করার যুদ্ধ ফিনিশদের এখানেই শেষ নয়। দিনে দিনে অনলাইন নিরাপত্তা আরও চ্যালেঞ্জিং ও প্রকট হচ্ছে। ফেক নিউজের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ১ম ধাপবা ২য় ধাপ বলে কিছু নেই। তা ভালোই করেই জানে ফিনল্যান্ড।

খবর সিএনএনের।

ইন্টারনেট ফিনল্যান্ড ফেক নিউজ ভুয়া খবর ভুল তথ্য মিডিয়া লিটারেসি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর