কংগ্রেসকে দুষলেন মোদি, ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংহতি
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০০
বিতর্কিত ‘দ্য সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল বা নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হয়ে উঠেছে। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে দেশ-বিদেশের অন্তত ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় সংহতি জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঝাড়খণ্ডে দেওয়া ভাষণে দাবি করেছেন, কংগ্রেস পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব দিতে চায় বলে আন্দোলনে নেমেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা তদন্তে অপারগতা জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।
মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর এসব ঘটনা ঘটেছে, খবর ফার্সটপোস্টের।
গায়ের জোরে যা ইচ্ছে তাই করছে বিজেপি: মমতা
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দ্বিতীয়বারের মতো মাঠে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কয়েক হাজার মানুষের মিছিলে নেতৃত্ব দেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে যে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলিকে সহমর্মিতা জানাই। আমরা বাংলায় এনআরসি হতে দেব না। বাংলা ছেড়ে যেতে দেব না কাউকে।’
মমতা জানান, ভোটে জিতে যা ইচ্ছে তাই করছে বিজেপি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করে মমতা বলেন, কেউ যাতে রাস্তা না আটকায় বা হিংসে না ছড়ায়।
এদিনের মিছিলে শামিল হয়েছিলেন তৃণমূলের দুই তারকা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরাত জাহান।
রাজধানী দিল্লিতে আবারও বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ইট-পাথর ছোড়াছুড়ি
দিল্লির সেলামপুরে আজ আবারও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পাথর ছোড়ার বিপরীতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। গত কয়েকদিনের বিক্ষোভ-আন্দোলনে দিল্লিতে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংহতি জানিয়েছে
অন্তত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালুমনাই ও ৪০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে হার্ভার্ড, ইয়েল, কলাম্বিয়া, স্টানফোর্ড, টাফটস ইউনিভার্সিটি। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলা আন্দোলনে সংহতি ও হামলা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এসব শিক্ষাঙ্গন। এদিকে পুলিশ বলেছে, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংঘর্ষের ঘটনায় ১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তারা কেউই শিক্ষার্থী নন।
ভারতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত আন্দোলন হয়েছে সেগুলো হলো, দিল্লির জহরাল নেহেরু ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দারবাদের মওলানা আজাদ ন্যালনাশ উর্দু ইউনিভার্সিটি, মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেস, মাদারজের আইআইটি ইনস্টিটিউট, চন্দ্রিগড়ের পাঞ্চাব ইউনিভার্সিটি ও ব্যাঙ্গালুরের আইআইএসসি।
শুনানি এখানে নয়, হাইকোর্টে যান: সুপ্রিমকোর্ট
জামিয়া ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং এবং কলিন গনসালভেস এর পিটিশন ফিরিয়ে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিমকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বলেন, এটা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা। বাসগুলোই বা কীভাবে পুড়ল? আপনারা কেন হাইকোর্টে আবেদন জানাচ্ছেন না?
‘যেহেতু এক একটি রাজ্যে এক এক রকম ঘটনা ঘটছে, ফলে সেই সব রাজ্যগুলো থেকে প্রমাণ সংগ্রহের বিষয় রয়েছে। তাই আদালত মনে করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টে আবেদন জানাক আবেদনকারীরা।’ মতামত জানান সুপ্রিমকোর্ট।
নকশালরা গুলি চালিয়েছে ছাত্রদের: মোদি
ঝাড়খণ্ডে এক নির্বাচনি সমাবেশে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, গ্রাম্য নকশালরা তোমাদের কাঁধে গুলি চালাচ্ছে।
তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, গেরিলা রাজনীতি বন্ধ করুন। ভারতের রাজনীতি বই (সংবিধান) দিয়ে পরিচালিত হয়। আমি কলেজের যুবকদের বলব, আমাদের পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক কর, আন্দোলন গণতান্ত্রিকভাবে।
কংগ্রেস পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব দিতে চায় বলেও বক্তৃতায় দাবি করেন মোদি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ ডিসেম্বর ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভার অনুমোদন পায় বিতর্কিত ‘দ্য সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯’। এরপর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হয় এই বিল। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে মুসলিম ব্যতীত অন্যধর্মের লোকেরা যারা ২০১৫ সালের আগে ভারতে এসেছেন তারা নাগরিকত্ব পেতে পারবেন।
মুসলিমবিদ্বেষী উল্লেখ করে এই বিলের প্রতিবাদে ভারতের আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়-কেরালা-পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। কেরালা ও পাঞ্চাবের রাজ্য সরকার জানিয়েছে তারা এই আইনের বিরোধিতা করছে। ভারতে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইসরায়েল দেশটির নাগরিকদের জন্য ভারত সফরে সতর্কতা জানিয়েছে।