‘বাবা বলেছিলেন— তোর ছেলে হবে স্বাধীন দেশের নাগরিক, নাম রাখবি জয়’
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৩২
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়ার পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন দেশ স্বাধীন হবে। আর সে কারণেই তিনি বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে তার প্রথম সন্তানের নাম ‘জয়’ রাখতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। তোর ছেলে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে, তার নাম রাখবি ‘জয়’।”
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ধানমন্ডি-৩২ নম্বর থেকে কিছুটা দূরে একটি বাসায় পাকিস্তানি সেনা হেফাজতে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে গৃহবন্দী থাকার স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তি পায় ১৬ ডিসেম্বর। আর আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম ১৭ ডিসেম্বর। কারণ আমার আব্বাকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর আমার মা, রাসেল, জামাল, রেহানা আমি গ্রেফতার হই। জামাল গেরিলা কায়দায় পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
উত্তাল সেসব দিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, সেই দিনটির কথা বারবার মনে পড়ে। আমাদের কাছে শুধু একটা রেডিও ছিল। আমরা রেডিও শুনছিলাম। চারদিকে জয় বাংলার স্লোগান। আমরা তখন ছিলাম অবরুদ্ধ কিন্তু মুক্তপ্রাণ। আমরা ওখানে বসে রেডিও শুনতাম আর নিজেরাই জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। ১৭ ডিসেম্বর সকালে মেজর অশোকসহ অন্যরা এসে আমাদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করে। ওই সময় আমরা যে বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলাম, সেখানে ছিল পাকিস্তানি পতাকা। আমরা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা সেই পতাকা নামিয়ে এনে পায়ে দলে আগুন লাগিয়ে দেন।
আরও পড়ুন- ‘পাকিপ্রেমীরা বিদেশেই থাক আর জেলখানায়ই থাক, চক্রান্ত থাকবেই’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ওই সময়ের সরকারের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। পরবর্তী ২১ বছর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা চলেছিল বলেও অবিযোগ করেন তিনি। ওই সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই সেনাশাসক ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেও আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছিল বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ওই সময়ই দেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছিল, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তারা সেবা পায়, তাদের মঙ্গল একমাত্র আওয়ামী লীগই করতে পারে।
এরপর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলেও ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও বজায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আজ একনেক বৈঠকে হিসাবটা পেলাম। অর্থনৈতিকভাবে আমরা শক্তিশালী হয়েছি। আমাদের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা আমরা রাখি। পদ্মাসেতুও আমরা নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করছি। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করে যাচ্ছি। দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া যে স্বপ্ন জাতির পিতার ছিল, আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন- এত নেতা ১৫ আগস্ট কোথায় ছিল?— প্রশ্ন শেখ হাসিনার
বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়। ছেলের নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলতেন, এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। একাত্তরের ২৩ মার্চ, আমি তখন সন্তান সম্ভবা। ওই সময় আব্বার হাত-পায়ের নখ আমি নিজের হাতে কেটে দিতাম। ওইদিন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হলো। আমাদের বাসা ৩২ নম্বরেও পতাকা তোলা হলো। তিনি পতাকা তুলে আসলেন, আমার কাছে বসলেন। আমি তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম। আমাকে বললেন, তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। ছেলের নাম রাখবি ‘জয়’। আমি দেখে যেতে পারব কি না, জানি না। তবে তোর ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। আমি আব্বার সঙ্গে সবসময় একটু বেশি কথা বলতাম। আমি বললাম, মেয়ে হলে নাম কী হবে? মেয়ের নাম দেন। তিনি মেয়ের নাম খুঁজতে গেলেন। খুঁজে-টুঁজে পছন্দ হলো না। বললেন, না, তোর ছেলেই হবে। তুই ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। সে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে।
‘তার মানে এই দেশ যে স্বাধীন হবে এবং এই দেশে যে আমরা বিজয় পাব, সেটা তিনি তার রাজনৈতিক হিসাবে আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি ভালো করেই জানতেন, এই দেশ স্বাধীন হবে,’— বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা জাতির পিতাকে নিয়ে তার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ শেখ হাসিনা সজীব ওয়াজেদ জয় স্বাধীনতা