সততার সঙ্গে কাজ করতে বিজিবি সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:১৫
ঢাকা: নিয়ম-নীতি মেনে সততার সঙ্গে কাজ করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজিবির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করবো আপনারা নিয়ম নীতি মেনে, শৃঙ্খলার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এমব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে, বিজিবি সদস্যরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের বুকে এখন আমাদের দেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এই দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, সরকার সবার সুযোগ-সুবিধা-বেতন বাড়িয়েছে, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই অর্জন এসছে। আমি চাই আপনারা দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার লক্ষ্য ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সুখি, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। তিনি তা গড়ে যেতে পারেন নাই। এখন আমাদের দায়িত্ব বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এরইমধ্যে আমরা অনেক এগিয়েছি, অনেক সাফল্য এসেছে। তবে এখানেই শেষ নয়, সামনে আরও এগোতে হবে।’
বিজিবি সস্যদের নিয়ম মেনে শৃঙ্খলা ও সততার সঙ্গে দেশের প্রতি তাদের যে দায়িত্ব তা পালনের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বিজিবির অগ্রযাত্রার যেন অব্যাহত থাকে সেই প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতার নিজের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে সারা বিশ্বের বুকে নাম করবে।’
শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ডকে একটি বাহিনীর অন্যতম চালিকা শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের কমান্ড মেনে চলবেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আর আপনাদের কোন সমস্যা হলে সেটা দেখার জন্য আমরাতো আছিই।’
তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কাছে এটাই আমরা চাই- আপনারা এদেশকে ভালবেসে সেদেশের মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করবেন। দেশ যদি উন্নত হয় তাহলে আপনাদের পরিবার-পরিজনরা এবং দেশের মানুষই উন্নত হবে। সে কথাটা সব সময় মনে রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকা- বিজিবি’র (তৎকালিন বিডিআর) ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন। ঐ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালকসহ যে সকল অফিসার, অন্যান্য সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি শহিদ হয়েছেন, আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।’
তিনি বলেন,‘বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে এ বাহিনী এখন সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।’
এর আগে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শনকালে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এবং প্যারেড কমান্ডার কর্নেল এ এম এম খায়রুল কবির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়া মটর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুল রউফ পাবলিক কলেজের প্রায় ৬শ’ শিক্ষার্থী ‘স্বাধীনতা ও উন্নয়নের আগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’শীর্ষক ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি দিবস উপলক্ষে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিডিআর কর্মকর্তাদের মাঝে বর্ডার গার্ড পদক-২০১৯, রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-২০১৯, বর্ডার গার্ড পদক সেবা-২০১৯ এবং রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা-২০১৯ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অংশ গ্রহণকারী প্যারেড কমান্ডার এবং অন্যান্য কন্টিনজেন্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।