১৬ বছর ধরে স্থগিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:১৮
ঢাকা: নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হওয়ার ২১ বছর পরও সে ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার হয়নি। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে গত ১৬ বছর ধরে বিচার কাজই বন্ধ রয়েছে বিচারিক আদালতে। এ অবস্থায় সোহেল চৌধুরী হত্যার বিচার কবে নাগাদ শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলাটি চলছিল ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ শামছুল হক বাদল সারাবাংলাকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নিম্ন আদালত অগ্রসর হতে পারছেন না। এজন্য আজও বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে মামলাটির।
জানা যায়, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছু দিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। একপর্যায়ে নেশা ও জুয়ায় ডুবে থাকতেন তিনি। সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই অবসান ঘটে তার জীবনের। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী।
ওই দিনই সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির এজাহারে আদনান সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। তবে মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এজাহারনামীয় আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটের বাকি আট আসামি হলেন— ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। এর মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন কারাগারে ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে এবং বোতল চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ১৬ বছরেও ওই রুলের নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে নিম্ন আদালতের বিচারকাজও থমকে রয়েছে। আসামিদেরও হাজিরা দিতে হচ্ছে না এই মামলায়।
বর্তমানে মামলাটি দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেনের আদালতে বিচারাধীন। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার ইমরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে মামলাটির বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত মামলাটির কাজ শুরু হবে না। হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ তুলে নিলেই শুরু হবে মামলার বিচারকাজ।
জানা গেছে, সোহেল চৌধুরীর মা নূরজাহান বেগম ও স্ত্রী দিতি নিয়মিত মামলাটির খোঁজ-খবর নিতেন। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুর পর দিতি একাই খোঁজ নিতেন মামলাটির। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ নায়িকা দিতিও মারা যান। এরপর আর সোহেল চৌধুরীর হত্যা মামলার খোঁজ-খবরও তেমন কেউ নেন না।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বনানীর এক ক্লাবে সোহেল চৌধুরী তার বান্ধবীকে নিয়ে গিলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে নায়ক সোহেল চৌধুরী আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেদিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার চেষ্টাও চালান সোহেল চৌধুরী।
ঘটনার কিছু দিন পর আসামিরা সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দিন সোহেল চৌধুরী রাত ১টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি ফিরে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থালেই তিনি মারা যান। খুনের পরপরই খুনি আদনান সিদ্দিকী হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরে বাকিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।