Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পার্থক্য গড়ে দেয় দক্ষতা


১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:১২

ঢাকা: দেশে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে, বিদেশে গেলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। অথবা এই দেশে আর কোনো আশা নেই। এ চিন্তা সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের মধ্যেই ঘুরপাক খায়।

এমন চিন্তা থেকেই অনেক মানুষ জমি, গরু-ছাগল বিক্রি আর উচ্চ সুদে টাকা ধার নিয়ে বিদেশ যান। কেউ ব্যাংক, ব্যালেন্স দেখিয়ে পড়তে যান। কেউ আইনী পথে পরিবার নিয়ে অভিবাসী হন। ভাগ্য ভাল হলে কেউ টিকে যান। আবার কেউ নানাভাবে হেনস্তা হয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। আবার কেউ হার মানেন মৃত্যুর কাছেও।

বিজ্ঞাপন

তবে শ্রমিক হিসেবে যারা যান তাদের বেশিরভাগেরই গল্প কষ্টের, হতাশার। বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে এদেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাত-আট গুণ অর্থ বেশি খরচ করতে হয়। এসব নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও তা অনেকটা কাগজে কলমেই থাকে। অথচ এ বিষয়টি সচেতনভাবে করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান হবে।

নানা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক দেশের চেয়েই বেশি অদক্ষ কর্মী পাঠায় বাংলাদেশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অদক্ষ কর্মীদের বেতন-ভাতা দক্ষদের তুলনায় কম হয়ে থাকে। পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলেও এর সত্যতা মেলে। পাশের দেশ ভারত, চীন বা শ্রীলংকা কম অভিবাসী পাঠিয়েও তারা অনেক রেমিটেন্স পায়। তাই উন্নত বিশ্বে কাজ করতে যাওয়ার আগে, সেখানকার কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষাগত দক্ষতা থাকা অতি জরুরী। বিশ্বের যেকোনো দেশ বা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দক্ষতার আর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্লেষকরা কিন্তু এখন এসব বিষয়ের দিকে নজর দেওয়ার কথা বারবার বলছেন।

বিজ্ঞাপন

এক হিসেবে দেখা গেছে, ভারত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে (২০১৭ সালে প্রায় ৬৯ বিলিয়ন এবং ২০১৮ সালে প্রায় ৭৯ বিলিয়ন ডলার)। অথচ বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুনের কিছুটা কম অভিবাসী কর্মীর কাছ থেকে এই অর্থ পেয়েছে দেশটি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের প্রাপ্তি ছিল ৬৭ বিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় হওয়া মেক্সিকো পেয়েছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। চীন ও মেক্সিকোর অভিবাসীর সংখ্যাও এদেশের চেয়ে খুব বেশি নয়।

অভিবাসী কর্মীর সংখ্যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের রয়েছে ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন, মেক্সিকোর ১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং চীনের রয়েছে ১০ দশমিক ৭ মিলিয়ন নাগরিক। সামগ্রিকভাবে দেখা যায় এই দক্ষতাই নানা কিছুর পার্থক্য গড়ে দেয়।

হতাশা কাটিয়ে ভাল খবরও আছে বাংলাদেশের। এদেশ থেকে অনেকেই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। ভাল সুযোগ পেলে কেউ থেকে যাচ্ছেন। বিশ্বের অনেক ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, কেউ নাসায়, কেউ গুগলে চাকরি করছেন। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসও গড়েছেন। এছাড়া, নানা দক্ষতার বিচারে প্রতিবছরই কোনো না কোনো দেশে স্থায়ী আবাস গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। আর দক্ষতা থাকলে অন্যদের চেয়ে ‍সুযোগ বেশি মিলবে সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত (১৯৭৬ থেকে অক্টোবর ২০১৯) ১২ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন কর্মী বিদেশে কাজ নিয়ে গেছেন। এছাড়া অবৈধভাবে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা আরো চার-পাঁচ মিলিয়ন হবে। তবে বিভিন্ন কারণে কর্মীরা ফিরে এলেও নতুন কর্মী যাওয়ায় সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ লাখ বা এক কোটি বাংলাদেশি সব সময়ই বিদেশে কর্মরত থাকছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন উপায়ে অনেকেই আবার ওই সব দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে নিয়েছেন। অভিবাসী কর্মীদের থেকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে, সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে দক্ষরাই বিদেশ যাবে সেই আশাই সবার। আর তাই ‘দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ সম্মান দুই-ই মেলে’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব অভিবাসী দিবস। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। তবে, দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে।

১৯৯০ সালে অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে ফেলে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে জাতিসংঘ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটসসহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। পরে ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ।

টপ নিউজ বিশ্ব অভিবাসী দিবস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর