Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কারচুপি করে তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হতে পারে’


১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৬

মানিকগঞ্জ: রাজাকারদের তালিকায় ত্রুটির কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ খ ম মোজাম্মেল হক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবতে পারিনি, ওরা (অন্যান্য সরকার) ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় থাকার সময় হয়তো বা সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রক্ষিত কাগজপত্র কারচুপি করে রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে রাখতে পারেন। এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। সেই কারণে ভুলটা হয়ে গেছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মাণিককগঞ্জ শহরের বিজয় মেলা মাঠে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি এভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এই ভুলে প্রধানমন্ত্রীও আহত হয়েছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মন্ত্রী বলেন, ‘দুই-চারজন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় তারা দুঃখ পেয়েছেন। আমার নাম এই তালিকায় আসলে যেমন কষ্ট পেতাম, তালিকায় তাদের নাম আসায় একই কষ্ট পাচ্ছি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকলে আমরা অচিরেই যাচাই-বাছাই করে সে নামগুলো প্রত্যাহার করে নেব। তবে রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের নাম থাকবেই। পরবর্তীতে যে তালিকা প্রকাশ করা হবে যেগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা ইউএনও কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীতে আর যেন ভুল না হয়, তা আমরা যাচাইবাছাই করে প্রকাশ করবো।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘এই তালিকায় ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল না। রাজাকারদের তালিকায় যাদের নাম ছিল, তা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল। এ কারণে যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করায় আমরা এই হোঁচট খেয়েছি। কাজ করতে গেলে ভুল তো হতেই পারে। ৬৪ জেলার ৪৬০টি উপজেলার যে সম্পূরক তালিকা আসবে পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। ত্রুটি পূর্ণ তালিকা মন্ত্রণালয়ের নিজ উদ্যোগে সংশোধন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, বল্লার (মৌমাছি) চাকে আমি হাত দিয়েছি। রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের তালিকা প্রকাশ করেছি। সঙ্গত কারণেই একটা বিশেষ শ্রেণি ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ৪৮ বছর পরে রাজাকারদের তালিকা করার কি দরকার? তারা তো বলবেই। কারণ, তাদের আঁতে ঘাঁ লাগে। কি করে তারা বুঝলেন যে, তাদের দলেই রাজাকার আছে। তারা (বিএনপি) বলছে, ষড়যন্ত্র করে তাদের নাম নাকি লিখে দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছু হলেই তারা শুধ যড়যন্ত্র দেখে। এট তাদের মুখস্ত কথা।’

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তালিকা সবেমাত্র শুরু হয়েছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছি, আমাদের একটু ভুল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কিছু লোক কিংবা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের নাম রাজাকারদের তালিকায় এসে গেছে। এ ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও আমি বিষয়টি জানিয়েছি।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের মানুষের ওপর পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আজ নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস ভুলতে বসেছে। আমাদের বইপুস্তকেও তা ঠিক মতো উল্লেখ নেই। বারবার আমি দাবি করে এসেছি, মুক্তিযুদ্ধ গৌরবগাঁথা উল্লেখ করলেই চলবে না, পাকবাহিনী ও দোসরদের নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না জানলে নতুন প্রজন্ম তা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনকে বাঁজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে করে দেশকে স্বাধীন করে গেছেন।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি বাড়ির জন্য ১৬ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও সভাপতি এবং যার নামে বরাদ্ধ হবে তিনি সদস্য হবেন। এতে টাকা-পয়সা এদিক-সেদিক হবে না। এ ছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য রাখা হবে। মানিকগঞ্জেও ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ১৬ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। আগামি ফ্রেব্রুয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্প শুরু হবে।’

মুক্তিযুদ্ধকালীণ জেলা কমান্ডার তোবারক হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান হানজালা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদসহ অনেকে।

কারচুপি তালিকা মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর