উত্তেজনা নয়, নয়াদিল্লিতে শান্তি চায় ঢাকা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:১৫
ঢাকা: নয়া দিল্লি’র উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে শান্তি বিরাজ করুক, ঐতিহাসিক বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বিষয়ে এমন প্রার্থনা ঢাকার। কেননা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে উত্তেজনা বিরাজ করলে তার তাপ গায়ে লাগে।
এদিকে, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিহার বনধের কর্মসূচি দিয়েছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। সেই কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) নেতা ও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি কানহাইয়া কুমার বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশাল ছাত্র সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের নাগরিক না মানলে, আমরাও আপনাদের সরকার মানব না।’
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বাংলাদেশের কোনো উদ্বেগ আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ভারত একটি বড় সরকার। ভারতে যদি উত্তেজনা-বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তবে এগুলোর আশেপাশে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে জন্য আমরা চাই যে, ভারত বা বিভিন্ন বড় বড় দেশ, যেমন আমেরিকায় যদি মন্দা দেখা দেয় তবে আমাদেরও কষ্ট হয়। পৃথিবীর এইসব বিষয় মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কেননা কোথাও কিছু সমস্যা হলে তার ফল-আউট আমাদের এখানেও হয়। আমরা চাই যে, সারা ভারতবর্ষে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং কোনো ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি হবে না। যেন আমাদের অসুবিধায় পড়তে না হয়।’
এর আগে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী অমিত শাহ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বলেন, ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণে তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি এনেছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন গত ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ব্যাপারে যে কথা উঠেছে, সেগুলো সত্য না। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মীয় নির্যাতন হয় না। আমাদের দেশে ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের কেউ নির্যাতিত হয় না। সাম্প্রতিককালে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক লোক দেশে ফিরে আসছে তার কারণ হচ্ছে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি এবং এখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারের অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয় অন্য ধর্মের লোক। আমরা তাদেরকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমানভাবে একই দৃষ্টিতে দেখি। কে কোন ধর্মের সেটি নিয়ে আমরা কোনো বিচার করি না। বিচার করি যে, সে বাংলাদেশের নাগরিক কি না বা তার যোগ্যতার মাপকাঠি কী? আমাদের সব রকমের চাকরি-বাকরিতে সকল ধর্মের লোক রয়েছে। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে আমরা তাদেরকে দেখি।’
পররাষট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত যে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে কথাটা সত্য না। যারা তথ্য দিয়েছেন, তারা সত্য বলেননি এবং যারা বুঝেছেন তারা সত্য কথা বলেননি। আমি আশা করব, আমাদের দেশে যারা সংখ্যালঘু নেতৃত্বে রয়েছেন তারাই এ বিষয়ে কথা বলবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যে ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশের মধ্যে এখন অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। যা সোনালী অধ্যায় নামে পরিচিত। আমাদের দেশের মানুষ আশা করে ভারত এমন কিছু করবে না যার ফলে আমাদের জনগণের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে।’
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে তার পূর্ব নির্ধারিত নয়া দিল্লি সফর বাতিল করেন। পূর্ব নির্ধারিত এই সফর বাতিল নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে যে সফরের আগের দিন রাতে ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ এনআরসি (ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) বিল পাসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়ায় এই সফর বাতিল হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ভারত সফর বাতিল করেন। সর্বশেষ দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকও পিছিয়ে দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন যে, শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার তাড়া থাকায় তিনি নয়া দিল্লি সফর বাতিল করেছেন।