Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়াসার পানি নেই ২ সপ্তাহ, ভোগান্তি চরমে পুরান ঢাকায়


১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:১৯

ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ঠিকমতো মিলছে না ওয়াসার পানি। এ অবস্থায় স্থানীয় দুয়েকটি টিউবওয়েল থেকে কলসি-বোতলে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন টাকা দিয়ে পানির জার কিনে কোনোমতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারতে। এতে স্থানীয়দের রান্না, খাওয়া ও গোসলসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন কাজগুলো করতে তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে কোথাও কোথাও ময়লা হলেও পানি মিলত। সে পানি খাওয়া না গেলেও নিত্যদিনকার কাজে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এখন সে পানিরও দেখা মিলছে না। এর ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন তারা। তবে কবে নাগাদ এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে, সে বিষয়ে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও মিলছে না জবাব। তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলছেন, ‘কিছু সমস্যা’ আছে, স্থানীয়রা সেটিকেই বড় করে দেখাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, তাঁতী বাজার, লক্ষ্মীবাজার, রাখাল চন্দ্র বসাক লেন, পান্নিটোলা, সুনতান নগর, কুমারটোলী, বসাক লেন, রাধুকা মোহন বসাক লেন, কৈলাস বোস লেন এলাকাগুলো ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১২ থেকে ১৫ দিন ধরে এসব এলাকায় ওয়াসার পানির সরবরাহ নেই। তাই বাসিন্দারা জীবন বাঁচানোর তাগিদে কেনা পানি ও এলাকার টিউবওয়েলগুলোর ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাতেও ভোগান্তির শেষ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পানি কিনতে তাদের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। যারা পানি কিনে ব্যবহার করতে সমর্থ নন, তাদের জন্য টিউবওয়েলে সকাল-বিকেল নেই, সবসময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে এক কলসি বা এক বালতি পানির জন্য। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও যেটুকু পানি মিলছে, তা বাসায় নিয়ে গেলে শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।

রাধুকা মোহন বসাক লেনের বাসিন্দা সাগর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরে পানি নেই। একদিন-দু’দিন কিনে আনা যায়। কিন্তু এতদিন ধরে পানি কিনতে গেলে তো নিজেদেরই বেঁচে দিতে হবে। অথচ এত ভোগান্তি দেখেও ওয়াসা নির্বিকার। সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। আমরা যাব কোথায়?

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা রাজিয়া বেগম বলেন, পানির সংকটে ঘরের বউরা রাস্তায় নেমেছে। একেকজন পাঁচ তলা, ছয় তলায় থাকে। এমন সমস্যা হলে তারা (ওয়াসা) অন্তত বিকল্প ব্যবস্থা রাখত। তা না করে পুরো মহল্লাটা বিপদে রাখছে। আগে চারশ টাকার গাড়ি (পানি) এখন এক হাজার টাকাতেও মিলছে না। ছেলেমেয়েদেরও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাদের নিয়েও পড়েছি বিপদে। পানি ছাড়া কী চলে? কত সমস্যায় আছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।

রিনা বালা দাস নামে লক্ষ্মীবাজারের এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন খাওয়া, গোসল ও কাপড়চোপড় কাঁচাসহ নিত্যকাজে অন্তত ২০ থেকে ২৫ কলসি পানি লাগে। এত পানি নিয়ে পাঁচ-ছয় তলা ওঠা যে কী কষ্টের, তা ভুক্তভোগী না হলে বোঝানো সম্ভব না। আরও কতদিন যে এ কষ্ট ভোগ করতে, হবে কে জানে!

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের এই সমস্যার কথা বারবার বলা হয়েছে ওয়াসা কর্মকর্তাদের। স্থানীয় কাউন্সিলরকেও এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কারও পক্ষ থেকেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচিত কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস স্থানীয়দের অভিযোগকে বলতে গেলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বাসিন্দারা যেভাবে পানির সমস্যার কথা বলছেন, আসলে সেভাবে সমস্যা নেই। সমস্যা যেটি চলছে, সেটি পুরান ঢাকার সব এলাকায় কমবেশি আছে। পানি যে একেবারেই নেই, তা নয়।

স্থানীয় টিউবওয়েলগুলোতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই কাউন্সিলর বলেন, পদ্মা পাড়ে ওয়াসার যে লাইন, সেটি মেরামতের কাজ চলছে। যে কারণে কিছু কিছু মহল্লায় এ সমস্যা আছে। তার মানে এই নয় যে ওয়াসার লোকজন বসে আছে। তারাও চেষ্টা করছে।

পানি সংকটের কথা স্বীকার করে তাঁতীবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের পরিচালক তাজউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের পাম্পে প্রতি মিনিটে ১৮ হাজার লিটার পানি তোলা হয়। কিন্তু তারপরও বাসা বাড়িতে পানি যাচ্ছে না। ঠিক কী কারণে এমনটি হচ্ছে, সেটি আমরা জানি না। দুঃখের কথা হলো, আমাদের পাম্পের পানি উঠলেও আমাদের ওয়াশরুমেই পানি নেই। যতটুকু জানি, মাওয়ায় পদ্মার লাইনে কাজ চলছে। সেজন্য সব লাইনগুলোকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সব দিকে পানি সরবরাহের জন্য। এর বেশি কিছু জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার মডস জোন-২-এর সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, পানি সংকটের জন্য যে দুর্ভোগ, তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। তবে সরবরাহ লাইন মেরামতের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলতে পারেননি ওয়াসার এই প্রকৌশলী।

ওয়াসা পানি পুরান ঢাকা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর