ছোট হয়ে এসেছে তালিকা, আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক কে!
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:০১
ঢাকা: রাত পোহালেই ২১তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বসছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এখন কাউন্সিল অধিবেশন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন একটাই— কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? দলের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কি ওবায়দুল কাদের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাবেন? নাকি রানিং মেট হিসেবে দশম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন কাউকে বেছে নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা?
দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, শুরু থেকেই এই সম্মেলন ঘিরে বেশ কয়েকজনের নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় এলেও সেই তালিকা এখন ছোট হয়ে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, সেই তালিকাটি এখন নেমে এসেছে মাত্র তিন জনে। তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তালিকার বাকি দুজনের নাম সুনির্দিষ্টভাবে বলছেন না কেউই। তবে সংক্ষিপ্ত সেই তালিকায় দলের সিনিয়র একজন নেতা জায়গা করে নিয়েছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ।
আরও পড়ুন- সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আশা-চিন্তার দোলাচলে যারা
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলনের প্রথম দিনের আয়োজন। সুচারু আয়োজনে সে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের সিনিয়র নেতাদের উৎকণ্ঠাও কমছে না। দলীয় সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার অবিসংবাদিত অবস্থান নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকায় শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালের কাউন্সিল অধিবেশনে কে পেতে যাচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব— তাই নিয়েই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের জল্পনা-কল্পনা।
১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শামসুল হক। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও আট আওয়ামী লীগ নেতা দায়িত্ব পালন করেছেন এই পদে। তাদের মধ্যে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ, জিল্লুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, সাজেদা চৌধুরী, মো. আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এবারের কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাবেন নাকি দশম সাধারণ সম্পাদক পাবে আওয়ামী লীগ— সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ‘এক নেতা এক পদ বা দল ও সরকার’ নীতিতে গঠিত হতে পারে এবারের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এই নীতির প্রতিফলন সাধারণ সম্পাদক পদেও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের দ্বিতীয় শীর্ষ এই পদে থেকে গেলে তাকে ছাড়তে হবে মন্ত্রিসভার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর পদ। তবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে ওবায়দুল কাদের যেভাবে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন, তাতে দৃশ্যমান হতে থাকা সেতুটির বাকি কাজ শেষ করার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়াটা কতটুকু সমীচীন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। তাদের কেউ কেউ বলছেন, বলতে গেলে পদ্মাসেতুতেই আটকে আছে কাদেরের সাধারণ সম্পাদক আর মন্ত্রিত্বের প্রশ্ন।
আরও পড়ুন- আ. লীগের সম্মেলন: নেতৃত্বে আসছে স্বচ্ছ ও মেধাবী মুখ
তবে ২০১৬ সালের কাউন্সিলে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর কাদের যেভাবে গত তিন বছরে দলকে সামলেছেন, তা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও প্রশংসাও কম নেই দলীয় মহলে। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসার পর যেভাবে ওবায়দুল কাদের ফের সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, তাতে দল ও সরকারে তার নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে নারাজ দলের নেতাকর্মীরাও। শেষ পর্যন্ত তাই মন্ত্রিত্ব আর সাধারণ সম্পাদকের পদের দুইটিই কাদের ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন, মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে চলতি রেখে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কোনো মুখই আনতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। নানা মতের ভিড়ে সবাই অবশ্য একটি জায়গায় একমত— শেষ মুহূর্তেও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য নেতাদের তালিকা যত ছোটই হোক না কেন, সেখানে ওবায়দুল কাদের আছেনই।
এদিকে, সম্মেলনের ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের বাইরে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম রয়েছে আলোচনায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এর বাইরেও আরও দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গাজীপুরের আজমত উল্লা খানের নামও ঘুরেফিরে এসেছে আলোচনায়।
আরও পড়ুন- ‘শেখ হাসিনার ডেপুটি হবেন তার মতোই চৌকস ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচিত এসব নামের তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। ওবায়দুল কাদেরের বাইরে আর মাত্র দুজন এখন রয়েছেন দলীয় সভাপতির বিবেচনায়। তবে সেই দুজনের তালিকায় কে কে আছেন, সে বিষয়টি নিয়ে নিঃসংশয় হয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। কেউ বলছেন, সিনিয়র একজন নেতা এখনো এগিয়ে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে। তার সঙ্গে রয়েছেন অন্য আরেকজন।
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে থাকা কে সেই সিনিয়র নেতা? আলোচনায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের নাম বিবেচনায় নিলে এগিয়ে থাকবেন সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। দলের বিভিন্ন সংকটের সময়ে তার ভূমিকার কারণে আস্থাবান ও বিশ্বস্ত হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। সে কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভায় সিনিয়র অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বাদ পড়লেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। স্বচ্ছ ও সজ্জন ইমেজ আর প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত আব্দুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দেওয়া হলে দল নতুন গতি পাবে— এমনটি মনে করেন দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই। সংক্ষিপ্ত তালিকার সিনিয়র নেতা হিসেবে ইঙ্গিতটা তার দিকেই— এমন মত তাদের। তবে ‘নির্ভেজাল’ ড. রাজ্জাক রাজনীতির ‘কূটচাল’ কতটুকু মোকাবিলা করতে পারবেন, তৃণমূলের কিছু কিছু স্থানে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিরসনে তার স্বচ্ছতা কতটুকু কাজে আসবে— তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে কারও কারও মনে।
আরও পড়ুন- ইতিহাস ঝংকৃত হলো অনন্য উদ্বোধনীতে
তবে গাজীপুরের আজমত উল্লা খানকেও পিছিয়ে রাখতে চান না অনেকেই। তারা বলছেন, দলের প্রতি যে নিষ্ঠা তিনি দেখিয়েছেন, তার উত্তম প্রতিদান হতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে তার আগমন। গাজীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা তিনি যেভাবে সামলে চলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেও যেভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাতে করে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এ-ও মনে করেন, আজমত উল্লা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকলেও এখনো ‘ঠিকঠাকমতো’ কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। এমন একজন সাধারণ সম্পাদক পদে নাও আসতে পারেন বলে মনে করেন তারা।
এদিকে, ‘জুনিয়র’ নেতাদের মধ্যে যারা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন, তাদের মধ্যে ঠিক একজন এখন সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বলে মনে করছে দলীয় বিভিন্ন সূত্র। তারা বলছে, এই তালিকায় থাকা দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের যে কেউই হতে পারেন এই একজন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যখন বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখা যায়, তখন এসব বিদ্রোহ দমন করে নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে একত্রিত করে দলতে জেতানোর ‘বিশেষ দায়িত্ব’ ছিল এই চার নেতার ওপর। নির্বাচনে এই চার কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও দল গোছানোর কাজটি চালিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন- তৃণূমূলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার শেখ হাসিনার
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়েও দলের ভেতরে ‘চার খলিফা’ নামেও খ্যাত হয়ে ওঠা এই চার নেতা যেভাবে দল, তথা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত থেকে দলের জন্য কাজ করে গেছেন, তাতে করে তাদের কারও কপালে আত্মত্যাগের প্রতিদান হিসেবে উঠে আসতে পারে নেতৃত্বের ঝাণ্ডা। সেক্ষেত্রে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের চেয়ে দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককেই এগিয়ে রাখতে চান কেউ কেউ। তারা বলছেন, সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে এক লাফে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রমোশন দেওয়াটা অভাবিত হতে পারে। অভিজ্ঞতা আর পদমর্যাদা বিবেচনায় ক্ষেত্রে দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকেরই এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে, দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আব্দুর রহমানের মধ্যে কেউ কেউ এগিয়ে রাখতে চান নানককে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সে আসনে মনোনয়ন পান সাদেক খান। গুঞ্জন ছিল, নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও টেকনোক্র্যাট হিসেবে নানক স্থান পাবেন মন্ত্রিসভায়। এর আগে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নানকের ঠাঁই হয়নি মন্ত্রিসভাতেও। তবে নির্বাচনের সময় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘বুঝিয়ে-শুনিয়ে’ একতাবদ্ধ করতে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসিত। সব মিলিয়ে কাউন্সিলের নানকের ‘কপাল খুলতে পারে’— এমন আশায় বুক বেঁধেছেন তার অনুসারীরা।
আরও পড়ুন- সোনার বাংলা গড়ে তুলবই, কাউন্সিলে প্রতিজ্ঞা শেখ হাসিনার
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের অনুসারীও তাকে পিছিয়ে রাখতে রাজি নন। ফরিদপুর-১ আসন থেকে একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তিনি। নানক, বি এম মোজাম্মেল হক ও বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিভেদ মিটিয়ে দল গোছানোর। সে দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে ছিলেন না আব্দুর রহমান। এর আগে, ২০১৬ সালের কাউন্সিলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কমিটিতে স্থান পান তিনি। ওই সময় সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর গুঞ্জন ছিল, মন্ত্রিসভাতেও আসবেন তিনি। তবে সে গুঞ্জন বাস্তবে রূপ পায়নি। কাউন্সিলে এসে সেই আব্দুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার হিসেবে খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ।
সাধারণ সম্পাদক পদে উত্তরণের জন্য দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের কোনো একজনও সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিতে পারেন বলে মনে করছেন দলের অনেক নেতা। তারা বলছেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বা বি এম মোজাম্মেল হকের সাংগঠনিক দক্ষতা বা নিষ্ঠায় পিছিয়ে থাকবেন না। দল ও শেখ হাসিনার কাছে আস্থার পরীক্ষাতেও এর একাধিকবার উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা। নির্বাচনে মনোনয়ন বা মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও তারা সাংগঠনিক কার্যক্রমে বরাবরই ছিলেন সক্রিয়। সরকার থেকে দলকে আলাদা করার যে নীতি মন্ত্রিসভায় প্রতিফলিত হয়েছে, সেই নীতিতেই তারা দল গোছানোতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সংসদ সদস্যপদ বা মন্ত্রিসভা স্থান পাওয়াকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি বা পুরস্কার হিসেবে দেখা হলে এই দুজন তার কোনোটিই পাননি। সাধারণ সম্পাদক পদে উত্তীর্ণ করলে সেটি এই দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য আরও বড় পুরস্কার হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন- ‘পলিটিশিয়ানের গণ্ডি পেরিয়ে স্টেটসম্যান শেখ হাসিনা’
‘চার খলিফা’র বাইরে দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকেও কেউ কেউ দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। রংপুর অঞ্চলের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বয়সে তরুণ হলেও এলাকা ও কেন্দ্রে তার ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। তার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার মতো তেমন কেউ নেই। বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা যদি শীর্ষ নেতৃত্বে তারুণ্যে আস্থা রাখতে চান, তাহলে খালেদ মাহমুদ বিবেচনায় এগিয়ে থাকতে পারেন বলে অভিমত অনেকের। তবে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় এই নেতা। দল-সরকার পৃথক নীতি অনুসরণ করলে তাই তাকে বিবেচনায় নাও নেওয়া হতে পারে— এমন মতও রয়েছে দলে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব মূলত থাকে কাউন্সিলরদের ওপর। তবে রীতি অনুযায়ী কাউন্সিলররা সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনের ভার তুলে দেন তাদের পরম নির্ভরযোগ্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপরই। ফলে শেষ পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নির্ভর করছে তার ওপরই। সেই শেখ হাসিনা কী ভাবছেন সাধারণ সম্পাদক নিয়ে?
আরও পড়ুন- হাওয়া লেগেছে নৌকার পালে [ফটো স্টোরি]
এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারওই। তবে আজ শুক্রবার কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সভাপতির বক্তব্য রাখার একপর্যায়ে উদ্ধৃত করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির জনক বলেছিলেন, ‘নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কেউ আকস্মিকভাবে একদিনে নেতা হতে পারে না। তাকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসতে হবে, মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনাও বলেন, ‘নেতা হতে হলে আত্মত্যাগের মনোভাব থাকতে হবে, দলের প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি থাকতে হবে।’
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন— তার যোগ্যতার মানদণ্ড হয়তো এই বক্তব্যেই পরিস্ফুট করেছেন দলীয় সভাপতি। দলের অভিজ্ঞ নেতারা হয়ত এই বক্তব্য ধরেই বুঝতে পারছেন, দলে সার্বিক অবদান বিবেচনায়, দলের জন্য আত্মত্যাগের বিবেচনায়, দলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মনোভাব বিবেচনায় সাধারণ সম্পাদকের সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকেও কে কে বাদ পড়তে যাচ্ছেন, আর কে চূড়ান্তভাবে হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনার রানিং মেট।
২১তম কাউন্সিল আওয়ামী লীগ আব্দুর রাজ্জাক ওবায়দুল কাদের কাউন্সিল অধিবেশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জিল্লুর রহমান তাজউদ্দিন আহমদ মো. আব্দুল জলিল শামসুল হক সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ