Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অনিশ্চয়তা নয়, আবেদ দর্শন নিয়ে এগিয়ে যাবে ব্র্যাক’


২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:২৬

ঢাকা: বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এর চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার নয়, বরং স্যার ফজলে হাসান আবেদের দর্শন দিয়ে এগিয়ে যাবে ব্র্যাক। তার দর্শনটা ছিল খুবই সুস্পষ্ট। সেটা হচ্ছে পৃথিবীতে ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোর জন্য কাজ করা। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে মহত্তর কাজ।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) কার্যালয়ে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন ব্র্যাকের বর্তমান চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন- সবার সঙ্গে ছিল তার আত্মার সম্পর্ক

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ বিভিন্নভাবে আমাদের মেসেজ দিয়ে গেছেন। সেই মেসেজ হলো— তার দর্শনকে আশ্রয় করে ব্র্যাককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা তার সেই দর্শনের দিকে নজর দিয়ে ব্র্যাককে এগিয়ে নিয়ে যাব। প্রথমত, তার দর্শনটা ছিল খুবই সুস্পষ্ট। সেটা হচ্ছে পৃথিবীতে অসংখ্য ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষ রয়েছে। এই মানুষগুলোর জন্য কাজ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে মহত্তর কাজ।’

‘দ্বিতীয়ত, এইসব ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের নিজেদের পরিবর্তনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে শ্রদ্ধা করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। তৃতীয়ত হচ্ছে, এই সম্ভাবনাগুলোকে ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানিক, সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক কারণ। সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। এসব করার জন্য আবেদ দর্শনকে ধরে কাজ করতে হবে, সেজন্য একটা প্রতিষ্ঠান  লাগবে। সেই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম, দক্ষতা, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। যেটা উনি ব্র্যাকের মাধ্যমে করে গেছেন,’— বলেন হোসেন জিল্লুর।

বিজ্ঞাপন

ভবিষ্যতে কী করতে হবে, সে বিষয়েও ফজলে হাসান আবেদ অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসান। তার দেওয়া দর্শন, চ্যালেঞ্জ আর অনুপ্রেরণাই ব্র্যাককে ভবিষ্যতে পথ চলতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘সফল হতে পারব কি পারব না, এটা বলার বিষয় না। দেখার বিষয়। চেষ্টা যদি করি, দর্শন যদি ঠিক থাকে, পরিশ্রম করে লেগে থাকা যায়, তাহলে সফলতা আসবেই।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ জানতেন, তিনি চলে যাওয়ার পর ব্র্যাকের কী হবে সেই প্রশ্ন উঠবে। সে কারণেই তিনি এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু সমাধান আর সুরাহা নিজেই দিয়ে গেছেন। সজ্ঞানে পূর্ণাঙ্গভাবে করে গেছেন সব সমাধান।

তিনি বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট মাসের বোর্ড মিটিংয়ে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদ পরিবর্তন করা হয়েছে, স্যার ফজলে হাসান আবেদ চেয়ার ইমেরিটাস হয়েছিলেন, ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হিসাবে আমাকে (ড. হোসেন জিল্লুর রহমান) নির্বাচিত করা হলো, আর ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের দায়িত্ব পেলেন আমিরা হক। পরবর্তীতে স্যার ফজলে হাসানের উদ্যোগেই আরেকটা নতুন স্তর তৈরি হলো। সেটা হলো ব্র্যাক গ্লোবাল বোর্ড। এটা হলো ব্র্যাকের বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা।’

হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, ফজলে হাসান আবেদ যখন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলেন, চিকিৎসকরা যখন তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, তখন তিনি নিজের কথা ভাবেননি, ভেবেছেন ব্র্যাকের সমস্যার কীভাবে সমাধান করা যায়। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সক্ষমতা ও সজ্ঞানেই ব্র্যাকে পরিবর্তনের বিষয়গুলো করে গেছেন। একইসঙ্গে যাদের দায়িত্ব দিলেন তাদের কী করা উচিত, সে চ্যালেঞ্জও দিয়ে গেছেন। এমন না যে উনি কোনো ফর্মুলা দিয়ে গেছেন। কিন্তু সব মিলিয়ে ব্র্যাকের পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করে গেছেন। তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক যেন কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে একেবারেই না পড়ে, সেই ব্যবস্থা করে গেছেন।

কেমন ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ?— জানতে চাইলে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তিনি খুবই বিনয়ী ছিলেন। তার অনেক অর্জন ছিল, কিন্তু তা নিয়ে কখনো কোনোদিন বাহাদুরি করেননি। মানুষ বুঝেছে, তিনি মানুষের জন্য কতটা করেছেন।

দুইটি জিনিস স্যার ফজলে হাসান আবেদকে নাড়া দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ব্র্যাক চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, স্যার আবেদের ছিল সচ্ছল জীবন। তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। ১৯৭০ সালের বন্যায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ— এ দু’টি বিষয়ই তাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এসবের কারণেই তিনি ভেবেছিলেন, এই দেশে পুনর্গঠনের কাজ করতে হবে। সেই থেকে কাজে লেগে যান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটা নিশ্চিত সচ্ছল জীবন ফেলে এসে সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন ফজলে হাসান আবেদ। অথচ সেই পথের গন্তব্য তার জানা ছিল না। কিন্তু তিনি লেগে থেকেছেন। এটাকে সৌখিনতা হিসেবে নেননি। তার প্রতিদানও তিনি পেয়েছেন। আজ তাই অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা নিয়েই শেষ শয্যার দিকে চলেছেন।

আরও পড়ুন-

ফজলে হাসান আবেদ আর নেই

কে ছিলেন, কেমন ছিলেন ফজলে হাসান আবেদ

নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব

ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

অবসরে ফজলে হাসান আবেদ, ব্র্যাকের দায়িত্বে হোসেন জিল্লুর

টপ নিউজ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ব্র্যাক ব্র্যাকে অনিশ্চয়তা স্যার ফজলে হাসান আবেদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর