‘অর্থ-সম্পদ নয়, নেতাকর্মীদের ভালোবাসাই আমার শক্তি’
২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫৮
ঢাকা: অর্থ বা সম্পদ নয়, দলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসাকেই নিজের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে আমি পরিবার হিসেবেই নিয়েছিলাম। আর আওয়ামী লীগের যে অগণিত নেতাকর্মী, তাদের স্নেহ-ভালোবাসাই আমার চলার পথে শক্তি। অর্থ-সম্পদ কোনোকিছু নয়, আমার একটিমাত্রই শক্তি, সেটা হলো আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী।
আরও পড়ুন- ‘ছুটি’ চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা, নতুন নেতা বেছে নেওয়ার তাগিদ
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশনে টানা নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এ কথা বলেন।
টানা নবমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেও শেখ হাসিনা জানান, তিনি দলের কাছ থেকে নিজের ‘ছুটি’ প্রত্যাশা করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি চাচ্ছিলাম, এই যে দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের দায়িত্বে ছিলাম, অন্তত আমাকে একটু ছুটি দেবেন। ৩৮টি বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি, ৩৯ বছর হতে চলছে। তাই একটু ছুটি দেবেন চাচ্ছিলাম।
তিনি বলেন, আমি কোনো পদে থাকি বা না থাকি, আওয়ামী লীগেই আছি, আওয়ামী লীগেই থাকব। এটাই আমার পরিবার। পঁচাত্তরে মা-বাবা-ভাই সব হারিয়েছি। যেদিন বাংলাদেশে ফিরেছিলাম, সেদিনই দেখেছি, আমি একটি বিশাল পরিবার পেয়েছি। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে এই সংগঠনটিকেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি যোকোনো মূল্যে।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে আপনাদের সামনের কথাও ভাবতে হবে। কারণ আমারও বয়স হয়ে গেছে। আমার কিন্তু ৭৩ বছর বয়স। এটা ভুলে গেলে চলবে না। কাজেই আস্তে আস্তে সংগঠন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আগামীতে নতুন নেতাও আপনাদের নির্বাচন করতে হবে। এখানে আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাদের নির্বাচন পর্ষদ (কমিশন) তারা আপনাদের কাছে মতামত চেয়ে আমাকে সভাপতি পদে আবার নির্বাচন করেছেন এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন- ‘অনেক কাজ বাকি, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ’
দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দনও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে কাজ করছি এবং ছাত্রলীগ সংগঠন থেকেই যাত্রা শুরু সকলের। আমি মনে করি, যে গুরুদায়িত্ব আপনারা দিয়েছেন, এই দায়িত্ব যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারি তার জন্য সবার দোয়া চাই, সমর্থন চাই। আর আপনারা নিজ নিজ সংগঠন গড়ে তুলবেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব চাওয়া হয়। তবে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও নাম প্রস্তাব করেননি কাউন্সিলররা। এর জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।
কাউন্সিলরদের প্রতি সংগঠন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এখানে আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কাউন্সিল থেকেই আমাদের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড— এই দুইটি বোর্ড গঠন করে নিয়ে যেতে চাই। এ বিষয়ে আপনাদের অনুমোদন চাচ্ছি। এসময় উপস্থিত কাউন্সিলররা সবাই হাত উঠিয়ে সম্মতি জানান।
এর আগে, কাউন্সিল অধিবেশনে আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেনের নেতৃত্বে অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান ও ড. মসিউর রহমান দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব আহ্বান করেন। সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এবং সে প্রস্তাবে সমর্থন জানান একই কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, তার প্রস্তাবে সমর্থন জানান একই কমিটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। এরপর এই দুই পদে বিকল্প আর কোনো নাম প্রস্তাব না হলে নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
এরপর নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চার জন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজনের নাম ঘোষণা করেন। এছাড়াও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করে কাউন্সিলরদের অনুমোদন নেন। এছাড়াও দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন তিনি। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রেখে সভাপতির অনুমতিক্রমে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পঠিত বলে গণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেন। এরপর জেলা কাউন্সিলে নবনির্বাচিত কয়েকজন জেলা সভাপতি কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
কাউন্সিল অধিবেশন বাজেট পেশ করেন দলের কোষাধক্ষ্য এইচ এন আশিকুর রহমান। এরপর গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনী ও সংযুক্তি পাসের জন্য অনুমোদন আহ্বান করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সর্বসম্মতিক্রমে দলের এসব প্রস্তাব পাস হয়।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২১তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ফাইল ছবি