ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে বিশ্বব্যক্তিত্বদের শোক
২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৫
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্বব্যক্তিত্বরা। তারা বলছেন, ফজলে আবেদ ছিলেন একজন মানবতাবাদী ব্যক্তি। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব একজন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিকে হারালো।
ব্র্যাকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতাসহ আরও অনেকেই শোক জানিয়েছেন ফজলে আবেদের মৃত্যুতে।
বিল ক্লিনটন বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসানের জীবন মানবতার জন্য এক বিরাট উপহার। ব্র্যাকে ৫০ বছরের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও তার বাইরে কোটি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিয়েছেন। একইসঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন।’
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘তার কর্মের বিপুল বিস্তৃতি ও প্রভাব এবং যে পরিপূর্ণ বিনয় সহকারে কাজগুলো তিনি সম্পন্ন করেছেন, উভয়ই আমাদের শিক্ষার নিবিড় পাথেয় হয়ে থাকবে।’
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার চারশ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরও অর্থ সংগ্রহ করে তিনি ১৬ হাজার ঘর করেছিলেন। তারপরও কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল, যা দিয়ে পরের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। এমনই এক মহৎ মানবতাবাদী ছিলেন তিনি। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনকে বিস্মৃত না হয়ে কীভাবে বৃহৎ ও কার্যকর সংগঠন গড়ে তুলতে হয়। তার কাজ আমাদের চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্তার দুফলো বলেন, ‘ফজলে হাসান আবেদের মতো মানুষ কয়টা হয়? তার অবর্তমানে আমরা সবাই একটু ছোট হয়ে গেলাম।’
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়ে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। আমরা, ইউনিসেফের সকলেই তার উন্নয়নভাবনাগুলোর অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করব।’
এর আগে, স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশ-বিদেশ থেকে আরও শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমু হোজুমি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ড্রেইটন, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ, যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ (ডিএফআইডি), অস্ট্রেলীয় সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (ডিএফএটি), সেভ দ্য চিলড্রেন ইউকে’র প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিনস, বিওপি হাব, ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী সাইদা রশীদ, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) সাহুল আফজাল চৌধুরী, ব্রিটিশ রেড ক্রসের সোফেনা লালানি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিবাহ নোয়াকো, সাজিদা ফাউন্ডেশন, জাগো ফাউন্ডেশন, ড. চঞ্চল খান, কামরুল মুরাদসহ অন্যরা।
রোববার আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা, বনানীতে দাফন
এদিকে, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ মুসা জানিয়েছেন, রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে জানাজা। পরে বনানী কবরস্থানে তার দাফন হবে।
আরও পড়ুন-
সবার সঙ্গে ছিল তার আত্মার সম্পর্ক
কে ছিলেন, কেমন ছিলেন ফজলে হাসান আবেদ
নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব
‘অনিশ্চয়তা নয়, আবেদ দর্শন নিয়ে এগিয়ে যাবে ব্র্যাক’
ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
অবসরে ফজলে হাসান আবেদ, ব্র্যাকের দায়িত্বে হোসেন জিল্লুর
অভিজিৎ ব্যানার্জি ইউনিসেফ এস্তার দুফলো জিম ইয়ং কিম ফজলে হাসান আবেদ বিল ক্লিনটন বিশ্বব্যাক্তিত্বদের শোক ব্র্যাক মেলিন্ডা গেটস স্যার ফজলে হাসান আবেদ