জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভারত
২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:১৮
ঢাকা: আসন্ন নতুন বছরের শুরু থেকেই ট্রানশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় দেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের উন্নয়নে মালামাল পরিবহনে বন্দর দুইটি ব্যবহার করা হবে।
এদিকে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন। শতভাগ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ হয়নি বলে চলতি সপ্তাহে পূর্বনির্ধারিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকও পিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কূটনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ওঠে, ট্রানশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার বিষয়টিও পিছিয়ে যেতে পারে। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভারত।
নৌপরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রানশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ার বিষয়ে গত সপ্তাহে নয়া দিল্লির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নৌসচিব নেতৃত্ব দেন।’
নৌসচিব আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সামনের জানুয়ারি থেকেই ভারত আমাদের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার শুরু করবে। তবে জানুয়ারির কত তারিখ থেকে তারা এটি ব্যবহার শুরু করবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন থেকেই বন্দর দুইটি ভারতের ব্যবহার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
নৌসচিব আরও বলেন, ‘শুরুতে ভারত ট্রায়াল রানের ভিত্তিতে বন্দর দুইটি ব্যবহার করবে। ট্রায়াল রানে যেসব সমস্যা চিহ্নিত হবে, তা সমাধানের পরই ভারত এই নৌপথ নিয়মিত ব্যবহার শুরু করবে। ট্রায়াল রান সর্বোচ্চ ২/৩ দিন চলতে পারে।’
এদিকে, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের খবর, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে কোনো মাশুল গুনতে হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌসচিব আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই তথ্য সঠিক নয়। বন্দরের স্বাভাবিক যে নিয়ম রয়েছে, সে নিয়ম অনুযায়ী বন্দর ব্যবহারসাপেক্ষে ভারত মাশুল পরিশোধ করবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌখাত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের নৌপথে পণ্য চলাচল সুবিধার জন্য প্রচলিত প্রটোকল ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) নিয়ে আলাপ হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহন বিষয়ে চুক্তি সই হয়।
এর আগে, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সঙ্গে সইয়ের জন্য ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন বি ইউজড অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটুইন দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া’ শীর্ষক চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌবাণিজ্য বাড়াতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) সই হয় এবং নৌবাণিজ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান থাকে। ওই প্রটোকলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ। পরে ওই বছরেরই ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে কোস্টাল শিপিং বিষয়ক চুক্তি, প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) সই হয়। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারেও স্মারক সই হয়।
পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুটের সিরাজগঞ্জ-দৈখাওয়া এবং আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ রুট উন্নয়ন, কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল এবং দুই দেশের মধ্যে নেভিগেশন সহায়ক সহযোগিতা সংক্রান্ত তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।