সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের আহ্বান
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র অপার সম্পদের উৎস। মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ মিমাংসার ফলে সমুদ্রের গুরুত্ব বহুগুন বেড়েছে। মৎস্য ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আপনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এই বাংলাকে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে জাতির পিতার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাহিনী অপারেশন জ্যাকপট অভিযান পরিচালনা করে। দেশমাতৃকার সেবায় এই বাহিনীর অবদান অনুসরণীয়।’
নৌবাহিনীকে আধুনিক করতে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় দুটো পেট্রোল ক্রাফট নিয়ে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নৌ ঘাটিগুলোকে কমিশন প্রদান করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে সব মাইন পুতে রেখেছিল সেগুলো অপসারণ করে এগুলো ব্যবহার উপযোগী করেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আমাদের বিশাল সম্পদের উৎস। ১৯৯৬ সালে আমরা সমুদ্রসীমা অর্জনের পদক্ষেপ নিই। ২০০৯ সালে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হই। সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ থাকতে হবে।’
নৌবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী বাহিনী তৈরি করতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০০৯ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা ফোর্সেল গোল-২০৩০ হাতে নিই। এরই ধারাবাহিকতায় নৌবাহিনীতে ২৭টি যুদ্ধজাহাজ সংযুক্ত করেছি। নৌবাহিনীর অ্যাভিয়েশন উইং সৃষ্টি করেছি। ২০০৯ সালে অত্যাধুনিক সাবমেরিন যুক্ত করি। যার ফলে এই বাহিনী উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শীতকালীন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন ও সালাম গ্রহণ করেন।
এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৬১ জন মিডশীপ ম্যান এবং ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ নবীন অফিসার কমিশন লাভ করেছেন। এর মধ্যে ৭ জন মহিলা এবং ২ জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছেন।
সদ্য কমিশন প্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশীপ ম্যান হিসাবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌ প্রধান স্বর্ণপদক এবং সাব লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে তথমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, এম এ লতিফ, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোস্তাফিজুর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং তিন বাহিনী ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
নৌবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ৭২ জন কর্মকর্তা একাডেমিক সীমানা অতিক্রম করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আজকে তারা প্রশিক্ষণের পর কাজে যোগ দেবেন। সবসময় মনে রাখতে হবে সততা, নিষ্ঠা একাগ্রতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের মানসম্মান আপনারা রক্ষা করবেন।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সন্তানরা আজ কমিশন পেয়েছেন। তারা আজ দেশে দেশের সেবায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করি। আপনাদের সন্তানদের এই সাফল্যের অংশীদার আপনারাও। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদেরকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই।’