‘এনআরসি’ বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রোহিঙ্গা সংকট: বিএনপি
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫৫
ঢাকা: ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রোহিঙ্গা সংকট হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনআরসি’র ব্যাপারে দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার তথাকথিত সু-সম্পর্কের সোনালী অধ্যায়ের এ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এনআরসি’র কারণে বাদপড়া ভারতীয়দের উঁইপোকা আখ্যায়িত করেছেন। তাদের প্রত্যেককে ভারত থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন তিনি। আসামের গোয়ালপাড়ায় ইতোমধ্যেই ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। সারা ভারতে আরও অনেকগুলো ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণ হওয়ার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জন্য আরেকটি রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে ভারতের এনআরসি।”
‘এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত, এ অবস্থায় এনআরসি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে নির্বিকার, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের Stateless করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমানদের stateless করে বাংলাদেশে পুশইন করার প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। অথচ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এনআরসিকে বার বার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করছে। বাস্তবিক অর্থে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এনআরসির কারণে ভারত থেকে আসা সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নেই।’
সম্প্রতি ভারতের আইনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার সময় সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অতিম শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় সে দেশে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। নির্ যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে।’
অমিত শাহ’র এই বক্তব্যকে শিষ্টাচার বহির্ভূত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের রাজনীতিকে অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় এটি প্রমাণ হয় যে, বর্তমান ভারত সরকার তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাংলাদেশের জনগণের পরিবর্তে নতজানু আওয়ামী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশি আগ্রহী।’
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বের দৃষ্টি যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি থেকে উদ্ভূত চলমান সংঘাতের ওপর নিবদ্ধ, ঠিক সেই সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে একটি সংখ্যালঘু রাষ্ট্রের লেবেল এঁটে দেওয়ার একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা আছে কী না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই মিথ্যাচারের কারণে একদিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তী কেবল ক্ষুন্নই হয়নি, বরং ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশ এবং এর নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’
বিএনপি সম্পর্কে ভারতের পার্লামেন্টে দেওয়া সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আশা করি, দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সম্পর্কে ভারতীয় পার্লামেন্টে যে অসত্য বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ভারত সরকার তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবে এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার লক্ষ্যে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বিরত থাকবে।’