থানা থেকে অস্ত্র-গুলি খোয়া, ৭ মাসেও হদিস পায়নি পুলিশ
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:১২
ঢাকা: শাহবাগ থানা থেকে ১৬ রাউন্ড গুলিসহ একটি চায়না পিস্তল খোয়া যাওয়ার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কে বা কারা অস্ত্র ও গুলি নিয়েছে সেটাও শনাক্ত করা যায়নি। গত ৫ মে এই অস্ত্র ও গুলি খোয়া যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অস্ত্র ও গুলি খোয়া যাওয়ার ঘটনায় গাফিলতির দায়ে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিমাংশু সাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শাহবাগ থানা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এক সাথে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। গত ৭ মাসে তদন্তেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি ঘটনার সময় সিসি ফুটেজ দেখে বহিরাগত এক যুবককে শনাক্ত করা গেলেও বিস্তারিত তথ্য না মেলায় ওই যুবককেও আটক করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অস্ত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। এখন পর্যন্ত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়নি। এমনকি কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগও তদন্ত করছে। এএসআই হিমাংশু সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছে।’
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের(দক্ষিণ)অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর মাঝে আমরা একটা অস্ত্র ও কিছু গুলি উদ্ধার করেছিলাম। কিন্তু হতাশার খবর যে, খোয়া যাওয়া অস্ত্রের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। অস্ত্র-গুলি উদ্ধার ও চোরকে ধরতে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘থানার সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের যুবক সন্দেহভাজন। তিনিই যে চুরি করেছেন সেটাও নিশ্চিত নই আমরা। তবে সন্দেহের তীর তার দিকে বেশি থাকলেও থানা পুলিশের কেউ সন্দেহের বাইরে নয়। এই চুরি রহস্য উদঘাটনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ডিউটি শেষে দুপুরে শাহবাগ থানায় ফেরেন এএসআই হিমাংশু সাহা। এর পর থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার বিশ্রামকক্ষে পোশাক পরিবর্তন করেন। তার ব্যবহৃত পিস্তল-গুলি বিছানায় রেখে কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর গোসলে যান। গোসল থেকে ফিরে তিনি তার অস্ত্র ও গুলি আর পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ৭.৬২ চায়না মডেলের পিস্তল ও ১৬টি রাউন্ড গুলির সন্ধান মেলেনি।
ঘটনা জানাজানির পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন এক যুবককে একাধিকবার থানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, পরিকল্পনা ছাড়া থানার ভেতর এমন ঘটনা সম্ভব নয়। অস্ত্র খোয়া যাওয়ার পর থানার সব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঘটনার আনুমানিক সময় ৪ টা ২০ মিনিট। এ সময়ে পুলিশ সদস্য ছাড়া শুধু একজন বহিরাগত যুবকই থানা কমপ্লেক্সের ভেতর ছিলেন। তবে পুলিশ সদস্যদের সাথে সন্দেহভাজন ওই যুবকের কথোপকথনের কোনো দৃশ্য মেলেনি সিসিটিভি ফুটেজে। এরপরও ওই সময় থানায় অবস্থানকারী কোনো পুলিশ সদস্যের সাথে ওই যুবকের কোনো ধরনের যোগাযোগ কিংবা তথ্য সহযোগিতা ছিল কিনা তা তদন্তাধীন।’
শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী খয়েরি সাদা চেক শার্ট পরিহিত, মুখে দাঁড়ি ও কালো ব্যাগ কাঁধে এক যুবক দুইবার থানায় প্রবেশ করেন। প্রথমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে প্রবেশের পর দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে মূল ফটক দিয়েই বের হয়ে যান তিনি। মাঝের ৪৮ মিনিট থানার ভেতরে তার অবস্থান কোথায় ছিল তা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি।
আবার বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে থানার পেছনের মসজিদের গেট দিয়ে আবার থানায় প্রবেশ করেন ওই যুবক। অস্ত্র বহনকারী এএসআই হিমাংশু তখন বাথরুমে। মিনিট তিনেক পর যুবক একই পথে বেড়িয়ে যান। ওই সময়েই অস্ত্র-গুলি চুরি হয় বলে ধারণা পুলিশের।