সংস্কার করা হবে রাজধানীর ১৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:০০
ঢাকা: রাজধানী ঢাকার ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে শতভাগ ভর্তি ও শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো নিশ্চিতকরণ, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা এবং পরিপূর্ণ উন্নতির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যও কমবে। এছাড়া প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। অনেক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেও ক্লাস চলছে। ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যাও কম। আসবাবপত্রগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী। পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাদের ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিলো- ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র তুলে ধরা, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং বিদ্যালয়গুলো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। জরিপের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুনঃনির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য অংশ, যেমন সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, মাঠ ভরাট প্রভৃতি সংস্কারের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আরও আকর্ষণীয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ, ১৭৭টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৬৭টি কক্ষের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো উন্নয়নসহ উত্তরাতে ৩টি ও পূর্বাচলে ১১টিসহ মোট ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা হবে।’ এর ফলে প্রকল্প এলাকায় শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।