‘এত সেবা দিই, তবুও ট্যাক্স না দেওয়ার তদবির করে’
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাপ্য কর না পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, ‘এত সেবা দেওয়ার পরও নগরবাসীর কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। কর না দেওয়ার জন্য অনেকেই নানা ধরনের তদবির করেন।’
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কে বি আব্দুস সাত্তার মিলনায়তনে ‘দরিদ্র-বান্ধব নগর উন্নয়ন’ শীর্ষক অংশীজন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন মেয়র। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে পাওয়ার অব পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি), আইপিই গ্লোবাল এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালা হয়েছে।
মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীকে বাসযোগ্য এবং গ্রিন ও ক্লিন সিটি বানাতে হলে সবার সহযোগিতা লাগবে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের অবদান অনেক বেড়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। নগরে সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিনা বেতনে পড়াশোনা করছে। অনেকে ভর্তি ফি ছাড়াও আমার সহযোগিতা নিয়ে ভর্তি হয়েছে।’
‘এত সেবা দেওয়ার পরেও নগরবাসীর আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। পৌরকর না দেওয়ার জন্য অনেকেই নানা ধরনের তদবির করেন। পান-সিগরেট খেতে হাজার টাকা ব্যয় করতে পারে। অথচ ট্যাক্স দিতে পারে না কতিপয় নগরবাসী। নগরবাসীর মধ্যে এই প্রবণতার পরিবর্তন না হলে করপোরেশনের সক্ষমতা কখনো বাড়বে না।’
মেয়র বলেন, ‘পাঁচ বছর পর পর পৌরকর মূল্যায়নের কথা আইনে আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন করতে গেলেই সমস্যা আর অভিযোগের পাহাড়। এসময় পাশে একটা লোকও পাওয়া যাবে না। তাই প্রয়োজন গতানুগতিক আইন পরিবর্তন।’
মেয়র আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে ১৪ লাখ ৪০ হাজার দরিদ্র মানুষ বাস করছে, যা অন্য শহরে নেই। দিনের পর দিন এদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে সিটি করপোরেশন হিমশিম খাচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের কাছে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ভাসমান মানুষের পুনর্বাসন করা যাবে। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে পারলে গ্রামের মানুষ শহরে আসবে না। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। আইন শৃঙ্খলারও অবনতি হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম ‘মন্দের ভালো শহর’ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। মেয়র বলেন, ‘সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়েও আমরা কাজ করছি। নগর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ আছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বিশ্বমানের নগর পুরোপুরি বলা না গেলেও , চট্টগ্রামকে মন্দের ভালো শহর বলা যাবে।’
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল ওয়াজেদ, ভারতের আইপিই গ্লোবাল প্রজেক্টের ম্যানেজার শ্রীপর্ণা সান্যাল আইয়ার, প্রান্তিক জনগোষ্টীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের টাউন ম্যানেজার মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন খান, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ছালেহ আহমদ চৌধুরীম, মো. আজম ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ বক্তব্য রাখেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নগরবাসীর হ্যোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা আসবে না। এ ব্যাপারে গণ-সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’