নাগরিকত্ব ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে এখনই কথা বলার সময়
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:০৪
ঢাকা: ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএবি) দেশটির সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লির রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিনই বাংলাদেশকে জড়িয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। সেইসঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে হঠাৎ করেই অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে। ফলে এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনই সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন উদ্বেগজনক বিষয়। এটা আগেও ছিল এবং অনেকটা সময় ধরেই থাকবে। ফলে এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে। যেহেতু ভারতের রাজনীতিতে এবং এই নাগরিকত্ব বিল সংশোধন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে রেফারেন্স দিয়ে কথা বলছে, তাই বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ভাবার কিছু নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিকদের এখনই ভাবা উচিত যে, ভারতের নাগরিকত্ব ইস্যু বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে। কারণ কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের মতো রিপিটেশন বাংলাদেশের পক্ষে আর বহন করা সম্ভব না।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আ ন ম মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘আসামের ২০ লাখ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। পাশাপাশি ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানোর একটা চেষ্টা হয়েছে। এই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রভাব শুধু ভারতেই নয়, গোটা অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে। বিষয়টি কোনোভাবেই বাংলাদেশের হালকাভাবে দেখা উচিত না।’
কুয়ালালামপুরে ২০-২৫টি মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গত ২০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘৭০ বছর সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে থাকার পর মুসলমানদের প্রতি বঞ্চনাধর্মী নতুন আইনের কেন প্রয়োজন পড়ল সেখানে? এতে অস্থিতিশীলতাই কেবল বাড়বে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই ইস্যূতে ভারতে কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে তা প্রতিবেশি দেশগুলোকেও আক্রান্ত করবে। তবে আমরা আশাবাদী যে, সমগ্র ভারতবর্ষে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি হবে না, যাতে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকা সফরে এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সামনেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বিষয়টি একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ। এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমি ভারতের মন্ত্রীর এই কথা বিশ্বাস করি। ভারতের মন্ত্রী আমাকে আরও বলেছেন যে, তাদের কখনোই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারকদের আরও একটু দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। বিষয়গুলোতে শুধুমাত্র আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বসে থাকলে হবে না। আশ্বাস আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বা আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে খুব একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় না। ফলে যেকোনো ধরনের কনক্রিট এভিডেন্স ছাড়া শুধুমাত্র আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের নীতি পরিচালনা করা ঠিক হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে চৌকস বিষয়টির ঘাটতি বরাবরই ছিল। তবে এই মুহূর্তে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা উচিত। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গোহাটিতে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের বাকি যে উদ্বেগগুলো রয়েছে সেগুলোও তুলে ধরার উপযুক্ত সময় এখন। সুতরাং কালক্ষেপণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে গোটা ভারতে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, একই ইস্যুতে ভারতের গোহাটির বাংলাদেশ উপ-মিশনও আক্রান্ত হয়েছে।