শীতেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩০
ঢাকা: সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পরে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। শীত মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন রোগের ধরণ পালটে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নভেম্বর মাসে চার হাজার ১১ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডিসেম্বর মাসে ২৩ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ২৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি মাসের ১৭ ডিসেম্বর থেকে দেশের শীতের মাত্রা বাড়লেও দেখা যায় এই সময়েও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৮ টা থেকে ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ২১০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে ৩৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের ধরন পালটে গেছে। এটি এখন আর নির্দিষ্ট কোনো মৌসুমের রোগ নেই। আগে দেখা যেত শীত মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তেমন পাওয়া যেত না, কিন্তু রোগের ধরন পাল্টে যাওয়ায় এটি এখন বছরের যে কোনো সময় দেখা দিতে পারে। আর তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। ভবিষ্যতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সচরাচর আগে শীত মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী খুব কম পাওয়া যেত। তবে ডেঙ্গু রোগের ধরন পাল্টেছে। আর তাই আসলে রিল্যাক্স থাকার কোনো সুযোগ নেই। হয়ত বা জুলাই-আগস্টের মতো রোগীর সংখ্যা বাড়বে না কিন্তু তাও ডেঙ্গু একেবারে শেষ হয়ে গেছে এমন ভাবার অবকাশ নেই। শীতকালে বৃষ্টির পানি কোথাও না জমলেও দেখা যায় অন্যান্য পানি জমা থাকছে বিভিন্ন স্থানে। আর জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে বছরব্যাপী। ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ যখন বেশি ছিল তখন সিটি করপোরেশনগুলো যেভাবে জোরালোভাবে কাজ করছিল সেখানেও কিছুটা ভাটা দেখা যাচ্ছে। যার কারণে আমরা অক্টোবর পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনার কথা বললেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শীতের মৌসুমেও পাওয়া যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম ধরে রাখতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। তবে এখনও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। বৃষ্টি না হলেও দেখা যায় ঘরের বিভিন্ন স্থানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। আর সেখানে মশা বংশবিস্তার করতে পারে। মূলত এবার ডেঙ্গু রোগের ধরন কিছুটা পাল্টেছে সেটি আমরা জানি। আর এ কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে এই মৌসুমে আরেকটা পিক মোমেন্ট আসার সম্ভাবনা তেমন নেই। কিন্তু সেই সম্ভাবনা যাতে আর না দেখা দেয় সে জন্য আমাদের বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ এক হাজার ২৪৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ লাখ ৮৫১ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৭ জন।
এছাড়াও চলতি বছর ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৪১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।