Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইন মানে না ড্রাগন সোয়েটার, পাওনা চাইলে চাকরি যায় শ্রমিকের


২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:০০ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত ড্রাগন সোয়েটারে শ্রমিক ও কর্মচারীদের ৩ থেকে ৮ মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারখানাটিতে ন্যায্য পাওনার বিষয়ে কথা বলা হলেই শ্রমিকদের নানা অজুহাতে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে ওই কারখানাটি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

জানা গেছে, ওই কারখানাটি বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের বেতনও অনিয়মিত। বেতন না পাওয়ায় অমানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এতে দেখা দিয়েছে শ্রম অসন্তোষ।

তবে কারখানার মালিকপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে শ্রমিকদের করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

কারখানাটির চেয়ারম্যান তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ওসি কুদ্দুস নামেও তিনি পরিচিত। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের বঞ্চিত করতে মালিকপক্ষ শক্তি প্রদর্শন করছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামরুস সোবহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব তথ্য ঠিক নয়। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

চাকরিচ্যুত হওয়া আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক ফ্লোর ম্যানেজার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাটিতে বেতন অনিয়মিত। এতে ছেলে-মেয়ের ঠিকমতো বরণ পোষণ করতে পারছি না। আর তা জানানোর কারণেই চাকরি চলে গেছে। যখন খুশি তখন বেতন দেবে, কেউ কিছু বলতে পারবে না। বললে জোর করে আইডি কার্ড রেখে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘কারখানাটিতে ১১ বছর কাজ করেছি। নভেম্বরের ১৬ তারিখ চাকরি চলে গেছে। এখনও অক্টোবর-নভেম্বরের বেতন পাওনা রয়েছে। তিন থেকে চারবার সময় দিয়েছে, কিন্তু টাকা দিচ্ছে না। আমরা এখন অসহায়।’

শাহিন নামের এক নিটিং অপারেটর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ হলো চাকরি চলে গেছে। কারখানায় কাজ না থাকলেও বেসিক বেতন দেওয়ার কথা। কিন্তু বেসিক দিচ্ছিল না। এ নিয়ে কথা বলায় আমিসহ চারজনকে একসঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হয়। কারখানাটিতে প্রতিমাসেই বেতন নিয়ে সমস্যা।’

চাকরি হারানো আরেক নিটিং অপারেটর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কী কারণে আমার চাকরি গেল আমি তাই জানি না। অফিসে আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু আমি কাজ করছিলাম। দিনের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি যাই। বাড়ি থেকেই শুনতে পাই না বলে বাড়ি যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আমার আইডি কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’

বর্তমানে কারখানাটিতে কর্মরত আছেন এমন এক শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। অক্টোবর ও নভেম্বরের বেতন এখনও পাইনি। অনেকের চার মাসের বেতন বাকি আছে। করপোরেট সেকশনে বেতন বাকি ৮ মাসের। কোনো কোনো শ্রমিকের বেতন বাকি আছে চার মাসের। আবার কারও দুই মাসের। নিটিং সেকশনে যারা আছে তাদের বেতন ঠিকমতো দেওয়া হলেও বাকিদের দেওয়া হয় না। আন্দোলন করলেই বের করে দেওয়া হয়। কথায় কথায় শ্রমিকদের চাকরি চলে যায়।’

প্রতিষ্ঠানটি থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া এক কর্মী সারাবাংলাকে জানান, এরইমধ্যে বিভিন্ন ধাপে ২১ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। শ্রম বিধি অনুযায়ী নোটিশ না দিয়েই তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বেশ কিছু দিন ধরেই বেতন অনিয়মিত রয়েছে। এরমধ্যে স্টাফদের বেতন বাকি ৭ মাসের। উৎপাদন পর্যায়ের শ্রমিকদের বাকি রয়েছে ৩ থেকে ৫ মাসের। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন করার অপরাধে নাজমুল নামের এক শ্রমিককে মুচলেকা রেখে কারখানাটি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, গেল বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে জিএম (এডমিন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (প্রশাসন) ইলিয়াস হায়দারকে হঠাৎ করেই জানানো হয়, তারা যেন প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি আর না করেন। কোনো রকম অব্যাহতিকরণ নোটিশ দেওয়া হয়নি তাদের। প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এদিকে কারখানাটিতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর এক অফিস আদেশে ইয়ার্ন কন্টোলার মোতালেব হোসের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, দায়িত্বে অবহেলার কারণে আপনার মাসিক বেতন ৩৪৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা কমিয়ে ৩০৮০০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হলো। ডিসেম্বর-২০১৯ থেকে তা কার্যকর হবে। এ সংক্রান্ত একটি কপি সারাবাংলার হাতে রয়েছে।

শ্রমিকদের অধিকারের বিষয় নিয়ে কারখানাটিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। এই সংগঠনের বাড্ডা, রামপুরা ও খিলগাঁও আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই কারখানাটিতে শ্রম আইনের তোয়াক্কা করা হয় না। শ্রমিকদের প্রতিনিয়তই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, কারখানাটিতে বড় ধরনের অনিয়ম রয়েছে। সোয়েটারের ক্ষেত্রে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ থাকে না। নিয়ম অনুযায়ী কাজ না থাকা সময়েও কারখানা মালিক শ্রমিকদের বেসিক দিতে বাধ্য। কিন্তু এই কারখানাটিতে তা করা হয় না। পাওনার কথা জানানো হলেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বা অন্য কোন অজুহাত দেখিয়ে আইডি কার্ড রেখে শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের রমনা-তেজগাঁও জোনের ইন্সপেক্টর নুরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে। পরিদর্শনের সময়ও আমরা বিভিন্ন ভায়োলেশন পেয়েছি। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সপ্তাহ খানেক আগে আমরা মামলা করেছি।’

কারখানা ড্রাগন সোয়েটার পোশাক কারখানা শ্রম আইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর