Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছোট ফ্ল্যাটের দামও অর্ধকোটি টাকার বেশি


২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:১০

ঢাকা: সাধ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন রিহ্যাবের শীতকালনীন আবাসন মেলায়। কেউ বা এসেছেন পছন্দ অনুযায়ী জায়গা কিনতে। তবে মেলায় সবই উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাট। ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া অনেকটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট আকৃতির বেশিরভাগ ফ্ল্যাটের দাম ৬৫ লাখ টাকা। আর মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চলমান শীতকালীন রিহ্যাব মেলার দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন স্টল ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে আগামী শনিবার।

বিজ্ঞাপন

নাভানার ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন দাম ৮৫ লাখ টাকা। মিরপুর ১০ এ ১৩২৮ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের দাম এটি। এর এই আবাসন প্রতিষ্ঠানটির মাঝারি ফ্ল্যাটের দাম দেড় কোটি টাকা। সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৩ কোটি টাকা মূল্যেও প্রতিষ্ঠানটি ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। বাড্ডায় শেলটেকের ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম সর্বনিম্ন দাম ৮১ লাখ টাকা। আর মালিবাগে ৯৭১ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৮৭ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানটির মাঝারি ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ১০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা। ডম ইনোর ১০১০ বর্গফিটের ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন দাম ৮০ লাখ টাকা। মাঝারি ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। র‍্যাংগসের ৬৫০ বর্গফুটের ছোট ফ্ল্যাটের দাম ৪৬ লাখ টাকা। রূপায়নের সর্বনিম্ম দাম ৭০ লাখ টাকা। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ছোট ফ্ল্যাটের দাম ৮১ লাখ টাকা। প্রিয়াঙ্গণের সবচেয়ে ছোট ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। কপোতাক্ষের ৬৬ লাখ টাকা।

মেলায় বাড়ি কিনলে গাড়ির অফার দিচ্ছে ট্রপিক্যাল হোমস। গুলশান-২ এলাকায় ১ বিঘা জমির ওপর ১৫ তলা ভবনে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এ সুযোগ থাকছে। ৩ হাজার ৭৫০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনতে খরচ পড়বে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ৩০ মাসের কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করা যাবে। আর ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে ২০২২ সালে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (মার্কেটিং) সৈয়দ রাব্বী ইবনে ইসলাম সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্বদেশ প্রোপার্টিজে রেডি প্লট পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৬৫ লাখ টাকায়। সাতারকুলের পাশে সাবভ্যালি আবাসন প্রকল্পে এই অর্থে জমি কেনা যাবে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তানভীর আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছে, মেলায় প্লট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ছাড় রয়েছে।

বরিশালের বাকলা ডেভেলপার মেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বরিশালে একমাত্র তারাই আবাসন নিয়ে কাজ করছে। বরিশাল বাস স্ট্যান্ডের পাশে নূর প্যালেস ও তাজ প্যালেসে তারা ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। নূর প্যালেসে ১২২৫ থেকে ১৩০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৪৬ লাখ টাকা। আর তাজ প্যালেসে ৫২ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (এডমিন) মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছে, ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে মেলায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে।

কক্সবাজারে নির্মিতব্য বীচ ক্লাব নামের একটি হোটেলে আড়াই লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে শেয়ার। শেয়ারধারীরা বছরে ৭ দিন ফ্রি এই হোটেলে থাকতে পারবে। তবে পুরো একটি স্যুটের মালিকানা পেতে হলে ৫২টি শেয়ার কিনতে হবে।

মেলায় জমি কিনতে আসা ব্যবসায়ী হাজী মো. সেলিম মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ ব্যবসায়ী। সস্তায় জমি চাচ্ছি। ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কমে এখানে রেডি প্লট নেই। সরকারিভাবে জমির দামের এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ বাইরের দেশে এলাকাভেদে জমির মূল্য প্রায় সমান।’

ফ্ল্যাট কিনতে আসা কল্যাণপুরের বাসিন্দা এস এম মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বেশিরভাগেরই দাম বেশি। ৬৫ লাখ টাকার নিচে কোনো ফ্ল্যাটই খুঁজে পাইনি।’

এদিকে মেলায় বিক্রি হচ্ছে কবরের জায়গা। এমআইএস হোল্ডিংস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিচ্ছে। পূর্বাচলে রওজাতুল জান্নাতে স্থায়ীভাবে কবরের জায়গা কেনা যাবে সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। ২০ বছরের জন্য বরাদ্দ নিতে খরচ হবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর ১০ বছরের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কবরস্থানে মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালিত হয়। এই অর্থ দিয়েই তা পরিচালিত হয়ে থাকে। রয়েছে সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থাও।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পূর্বাচল রাওজাতুল জান্নাত প্রকল্পের আওতায় কবরের জমি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর এ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর সঙ্গে করস্থানসহ মসজিদ ও মাদরাসা ও এটিমখানা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থায়ী কবরের মূল্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ২০ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি স্থায়ী কবর কিনতে লাগবে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। যিনি স্থায়ী কবরের জন্য জমি কিনবেন তাকে সাব-কাবলা রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। এই জমি আর কাউকে দেওয়া হবে না।’

তিনি আরও জানান, ‘অস্থায়ী কবর হচ্ছে ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পর এসব কবর আবারও ব্যবহার করা হবে। ২০ বছর মেয়াদী কবরের মূল্য সার্ভিস চার্জসহ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী কররের মূল্য এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।’

প্রপার্টি কানেক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাড়ি ও জমি কেনার ক্ষেত্রে মিডিয়া হিসেবে কাজ করছে। মেলায় তাদের স্টল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা জানান, নতুন পুরাতন যেকোনো বাসাবাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ভালোই সাড়া পেয়েছে।

এদিকে মেলায় কমসুদে হাউজ লোন দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এবার মেলায় সর্বনিম্ন ৯.৫ শতাংশ সুদে হাউজ লোন দিচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক দিচ্ছে ৯.৯০ শতাংশ সুদে লোন। তবে কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে সুদ হার ১০ শতাংশ। মেলায় প্রতিষ্ঠানটি প্রসেসিং ফি রাখছে অর্ধেক। ব্র্যাক ব্যাংক দিচ্ছে ১০ শতাংশ সুদে হাউজ লোন। এই ব্যাংকটিও প্রসেসিং ফিও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। মিচুয়াল ট্রাস্টের সুদ হার ১০.৫, প্রাইম ১০.৫, ডেল্টা ১০.৫, আইডিএলসি সার্ভিস হোল্ডারদের জন্য ১০.৯৯ ও ব্যবসায়ীদের জন্য ১১.৪৯, লংকা বাংলা-১১.৪৯, ব্যাংক এশিয়া ১১, স্ট্যাডার্ড ১১, ন্যাশনাল হাউজিং ১১ এবং আইপিডিসি ১১ শতাংশ সুদে লোন দিচ্ছে। আর আইএফআইসির সুদ হার ১০ থেকে শুরু ১১ শতাংশ। মেলায় ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে আসা ক্রেতাদের অনেককেই ঋণ নিতে ব্যাংকের স্টলে খোঁজ নিতে দেখা গেছে।

সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাঁচ দিনের এই মেলায় রয়েছে ২৬০টি স্টল। তার মধ্যে রয়েছে ১১৬টি আবাসন প্রতিষ্ঠান, ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ৩০টি নির্মাণ সামগ্রি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে এই মেলা। প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা, তবে মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। এই টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী পাঁচবার মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।

ফ্ল্যাট মেলা রিহ্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর